‘মারুতি ৮০০’। তারপর ‘অল্টো’। ভারতীয় মধ্যবিত্তের স্বাদ ও সাধ্যের মেলবন্ধন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি ‘এন্ট্রি লেভেল’ বা প্রথম কেনা কম দামি গাড়ির বাজারে মারুতি-সুজুকির সেই একচ্ছত্র আধিপত্যে প্রভাব পড়ছে? গাড়ি শিল্পের হিসেব বলছে, সম্প্রতি দেশে এক মাসে যত অল্টো বিক্রি হয়েছে, মাত্র বছরখানেক আগে বাজারে আসা ‘কুইড’ বিক্রি হয়েছে প্রায় তার অর্ধেক। আর এক নতুন গাড়ি ‘রেডি-গো’-র মাসিক বিক্রি জুলাইয়ে অল্টোর বিক্রির প্রায় ২০%।
শিল্পের ইঙ্গিত, ভারতে প্রতিযোগিতা বাড়ছে ছোট গাড়ির বাজারে। প্রথম গাড়ি কিনতে এসে রকমারি সম্ভার নাগালের মধ্যেই মিলছে, যার জেরে কিছুটা টান পড়ছে অল্টো বিক্রিতে। তবে এই তত্ত্ব মানতে নারাজ মারুতি। সংস্থার দাবি, ব্র্যান্ড হিসেবে অল্টো-র জনপ্রিয়তা কমেনি। তবে বিভিন্ন সংস্থার গাড়ি এলে বাজার বাড়ে, সকলের সামনেই তৈরি হয় নতুন সুযোগ।
সাধ্যের মধ্যে থাকা দামের পাশাপাশি কম জ্বালানিতে বেশি পথ চলা ও বিক্রির পরের পরিষেবায় দক্ষতা বরাবরই ক্রেতা টানতে অল্টো-কে সাহায্য করেছে বলে মনে করছে গাড়ি শিল্পও। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোট গাড়িতেও বাড়তি সুবিধা, হাল আমলের নকশার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতার। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ন্যানোর পরে হুন্ডাইয়ের ইয়ন সে আকাঙ্ক্ষা কিছুটা পূরণ করলেও অল্টো শেষ পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছে।
তবে প্রতিযোগিতার দৌড়ে নামতে ২০১৫ সালে ভারতে তাদের প্রথম ছোট গাড়ি কুইড (৮০০ সিসি) আনে ফরাসি বহুজাতিক রেনো। নতুন নকশা, কিছু বাড়তি সুবিধা যা সাধারণত এই দামের গাড়িতে অমিল, সেটাই তারা দিচ্ছে বলে দাবি রেনোর। অল্টোর মতো এ বার ১০০০ সিসির কুইডও এসেছে। তেমনই এ বছর জাপানি বহুজাতিক নিসানের কম দামি ব্র্যান্ড ডাটসন এনেছে ‘রেডি-গো’ (৮০০ সিসি)। সংস্থার দাবি, এটিতেও মিলছে একগুচ্ছ সুবিধা। এবং দামে অল্টোর চেয়ে কম।
গাড়ি শিল্পের সংগঠন সিয়াম-এর হিসেব, ২০১৬-তে মে ছাড়া বাকি সব মাসেই ৯ হাজারেরও বেশি কুইড বিক্রি হয়েছে। মার্চের তুলনায় জুলাইয়ে অল্টোর বিক্রি প্রায় ২২০০ কমে দাঁড়ায় ২০ হাজার। মে থেকে জুলাইয়ে রেডি-গো-র বিক্রি প্রায় ৬.৮ গুণ বেড়ে ৪ হাজারের মতো। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, নতুন নতুন বিকল্প বাজারে আসায় সেগুলির চাহিদা বাড়ার হাত ধরে ছোট গাড়ির বাজারও বাড়ছে।
বৃহত্তর কলকাতার ছবিটা কেমন?
রেনোর ডিলার ‘রেনো কলকাতা সেন্ট্রাল’-এর ডিরেক্টর বেদান্ত অগ্রবাল জানান, তাঁরা মাসে গড়ে ১৫০টি কুইড বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত মোট বিক্রি ১১০০টি। কিছু সংস্করণের প্রায় দেড় মাস ‘ওয়েটিং পিরিয়ড’ চলছে। এপ্রিলে এসেছে ডাটসনের রেডি-গো। নিসানের অন্যতম ডিলার মোহন মোটরসের এমডি সন্দীপ বজাজের দাবি, মাসে গড়ে ৫০-৬০টি গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। উৎসবের মরসুমে তা ১০০ ছুঁতে পারে।
অন্য দিকে, মারুতি-সুজুকির একটি ডিলার সূত্রের দাবি, তাঁরা মাসে গড়ে ১৫০-১৬০টি অল্টো বিক্রি করছেন। শিল্প সূত্রের খবর, মোট অল্টো বিক্রি মাসে ৩০০-র কিছু বেশি। মারুতি-সুজুকির এক মুখপাত্রের দাবি, ৩-৪ বছর এই ধরনের গাড়ির বাজার খারাপ থাকলেও গত অক্টোবর-মার্চ পর্যন্ত দেশে মাসে ২১-২২ হাজারটি করে অল্টো বিক্রি হয়েছে। নতুন অল্টো বাজারে আসার অপেক্ষায় ডিলাররা কম গাড়ি কেনায় এপ্রিলে তা ১৬ হাজারে নামে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় মে মাসেও বিক্রি
কম হয়েছে। তাঁর দাবি, উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটাই এখন ব্যবহৃত হওয়ায় চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি তৈরি করা যাচ্ছে না। বাজার ধরে রাখতে গাড়ি উন্নত করার পাশাপাশি পরিকাঠামো সম্প্রসারণও করছে মারুতি। পিছিয়ে থাকতে রাজি নয় রেনো, নিসানও। ছোট শহর, গ্রামে ডিলার নিয়োগ থেকে শুরু করে পথে বিপদে পড়লে দ্রুত সাহায্যের পরিকাঠামোর উপরে জোর দিচ্ছে সব সংস্থাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy