Advertisement
E-Paper

সুপারিশ নেট নিরপেক্ষতা বজায় রাখার

বছর কয়েক আগে অভিযোগ ওঠে যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ভারতেও গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে কিছু ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বছর দেড়েক সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত শোনার পরে শেষ পর্যন্ত নেট নিরপেক্ষতা বজায় রাখার পক্ষেই সুপারিশ করল টেলিকম নিয়ন্ত্রক ট্রাই। ইন্টারনেট পরিষেবা একটি মুক্ত মঞ্চ। সেখানে সকল গ্রাহকের সমান অধিকার। সেই সম অধিকার বা নেট-নিরপেক্ষতা (নেট নিউট্রালিটি) বজায় রাখার পক্ষেই এ দিন সওয়াল করল তারা। জানাল, ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থাগুলি এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে কোনও বৈষম্য করতে পারবে না।

বছর কয়েক আগে অভিযোগ ওঠে যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো ভারতেও গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে কিছু ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা। এ নিয়ে তখন সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ২০১৬ সালে ফেসবুক, এয়ারটেলের মতো সংস্থাগুলিকে (যারা বিশেষ সুবিধা চালু করেছিল) ভিন্ন মাসুল হার স্থির করতে নিষেধ করে ট্রাই। শুরু হয় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত জানতে আলোচনা। এ দিনের সুপারিশ তার পরেই।

তবে উল্লেখ্য, ভারতে যে দিন ট্রাই নেট-নিরপেক্ষতার পক্ষে মত দিল, তার আগের দিনই আমেরিকায় নেট-নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছেন সে দেশের টেলিকম নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান অজিত পাই। বেশ কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নেট নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ২০১৫ সালে নতুন নিয়ম জারি হয় মার্কিন মুলুকে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত পাই সেই নিয়ম বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছেন। ১৪ ডিসেম্বর কমিশনের বৈঠকে ওই প্রস্তাব নিয়ে ভোট হওয়ার কথা।

ট্রাইয়ের চেয়ারম্যান আর এস শর্মা অবশ্য বলেন, ‘‘কেউ নেটের মালিক নন। সকলেই যাতে তা সমান ভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সে জন্য এটা মুক্ত থাকাই উচিত।’’

ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া বলেছে, এটি বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত। দেশের ডিজিটাল পরিষেবা সম্প্রসারণের পক্ষে জরুরি। কেন্দ্রকে এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে তারা। টেলিকম সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআইয়ের আবার দাবি, নেট-নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা বিস্তৃত হোক।

পাশাপাশি নেট-নিরপেক্ষতার কৃতিত্বের দাবি নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। পরে দলনেত্রী সহ অন্যদের এ নিয়ে ইন্টারনেটে বক্তব্য পোস্ট করতে থাকে তৃণমূল কংগ্রেস।

নেট নিরপেক্ষতার গোড়ার কথা

বিষয়টি কী?
ইন্টারনেট অনেকটা সেই রাস্তার মতো যা দিয়ে জোড়া যায় দুনিয়ার সমস্ত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা মোবাইল। ওই রাস্তার উপর সমস্ত গ্রাহকের অধিকারও সমান। কাউকে তার কোনও অংশ ব্যবহারে সাধারণত বাধা দেওয়া চলে না। কিছুটা এই কারণেই আমরা নেট বেয়ে যাতায়াত করা তথ্য (ডেটা) ব্যবহারের জন্য টাকা গুনি। কিন্তু রাস্তার ‘টোল’ গুনি না। সহজ কথায় এটিই নেট নিরপেক্ষতা।

বিতর্ক কোথায়?
ধরা যাক, একটি নেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবা তার গ্রাহকদের জন্য চিহ্নিত করল। এবং হয়তো বলল, শুধু ওই ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ এবং ‘ঘ’ পরিষেবার গোছা তাদের কাছে নিলে মিলবে বাড়তি সুবিধা। তা সে দ্রুতগতির নেট হতে পারে কিংবা কম মাসুলের (এমনকী নিখরচার) সুবিধা। অর্থাৎ, ওই নেটের রাস্তায় অন্যদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরা। অন্য দিক থেকে দেখলে, বাকিরা কিছুটা বঞ্চিত। বিতর্কের শিকড় এখানেই।

সংস্থার যুক্তি?
যে সব সংস্থা নিরপেক্ষতা এড়িয়ে বিশেষ পরিষেবায় বিশ্বাসী, তাদের অনেকের যুক্তি, এতে সস্তায় (কিছু ক্ষেত্রে নিখরচাতেও) প্রাথমিক ভাবে জরুরি কিছু ওয়েবসাইটের তথ্য ও পরিষেবা গ্রাহকের দরজায় পৌঁছনো সম্ভব। সব একসঙ্গে দিতে গেলে যা করা যাবে না।

তা হলে সমস্যা?
উল্টো পক্ষের মতে, ওটি নিছকই বিপণন কৌশল। আদপে তা খোলা ভাবে নেট ব্যবহারে বিধিনিষেধ।

ধরা যাক, কেউ উল্টোডাঙ্গা থেকে ধর্মতলা যেতে চান। তার অনেক রাস্তা রয়েছে। যে যেটা খুশি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যদি বলা হয়, একটি নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে গেলে তবেই তিনি সুবিধা পাবেন, তাহলে সমান অধিকারের তত্ত্ব খারিজ হয়। নির্দিষ্ট কয়েক জনের জন্য দ্রুতগতির রাস্তা আলাদা করে দিলেও নিরপেক্ষতা বজায় থাকে না। মুশকিল সেখানেই।

হঠাৎ আলোচনা?
বছর কয়েক বছর আগে এয়ারটেল ও ফেসবুকের বিনামূল্যে কিছু অ্যাপ ও ওয়েবসাইট পরিষেবা দেওয়া নিয়ে ভারতে মাথাচাড়া দিয়েছিল নেট নিরপেক্ষতার বিতর্ক। তাদের বক্তব্য ছিল, এতে দ্রুত ছড়াবে নেট ব্যবহার। কিন্তু ‘সেভ দ্য ইন্টারনেট’-এর তরফে পাল্টা দাবি ওঠে গ্রাহকের অধিকারে বৈষম্যের। আশঙ্কা তৈরি হয় একচেটিয়া কারবারেরও। প্রশ্ন ওঠে, বাজার দখলের পরেও ওই সব পরিষেবা বিনামূল্যেরই থাকবে তো?

এ দিন কী হল?
দেড় বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনে এ দিন নেট নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সওয়াল করেছে ট্রাই।

Internet TRAI ট্রাই
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy