টানা ছ’দিন ধরে পড়ছে শেয়ার বাজার। তলানি ছুঁয়েছে ডলারে টাকার দামও।
বাজার সূত্রের খবর, এক দিকে দেশে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে চূড়ান্ত সমস্যায় নগদের বাজার। অন্য দিকে আমেরিকায় সুদ বাড়ার সম্ভাবনা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতায় তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। এই সাঁড়াশি চাপেই পড়ছে সূচক। এই পতনও টাকাকে টেনে নামানোর জন্য অনেকটাই দায়ী।
পড়তে পড়তে গত ছ’মাসের মধ্যে সব থেকে নীচে এসে দাঁড়িয়েছে বাজার। সোমবারও ৩৮৫ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স থিতু হয় ২৫,৭৬৫.১৪ অঙ্কে। নিফ্টি পড়েছে ১৪৫ পয়েন্ট। দাঁড়িয়েছে ৭,৯২৯.১০ অঙ্কে। এ দিন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও ৩ পয়সা পড়েছে। এক ডলার হয়েছে ৬৮.১৬ টাকা।
আমেরিকার ঋণনীতি কী হতে চলেছে, তা নিয়ে চূড়ান্ত উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে ভারতের মূলধনী বাজারে। কারণ, মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের চোয়ারপার্সন জ্যানেট ইয়েলেন যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার থেকে লগ্নিকারীদের মনে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, আগামী মাসেই মার্কিন মুলুকে বাড়তে পারে সুদ। আর সেটা হলে ভারত থেকে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি সে দেশে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়তে পারে।
পাশাপাশি ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে সে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘আউটসোর্সিং’ বন্ধ করা-সহ আরও কিছু নীতি গ্রহণ করে চলেছেন বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির আয়ের উপর।
এই সব কারণে শেয়ার বাজারের লগ্নিকারীদের কপালে ফুটেছে গভীর চিন্তার রেখা। বিশেষ করে আতঙ্কিত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। তারা গত দু’দিনে ভারতে শেয়ার বেচেছে ২২৩৬ কোটি টাকারও বেশি। এ দিনই তাদের বিক্রির অঙ্ক ছিল ১৩১০ কোটি।
এখন প্রশ্ন, এই পতন থামবে কোথায়? যার উত্তরে বিশেষজ্ঞরা একমত নন। যেমন, ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জর প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক মনে করেন, ‘‘চার মাসের আগে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা কম।’’ তাঁর আশঙ্কা, নিফ্টি আরও প্রায় ৪০০ পয়েন্ট এবং সেনসেক্স প্রায় ১০০০ পয়েন্ট পড়তে পারে। আবার এতটা নিরাশ হতে নারাজ স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ। নিফ্টি আরও প্রায় ৪০০ পয়েন্ট পড়ে ৭৫০০-র কাছে চলে আসতে পারে বলে মনে করলেও, কমলবাবুর অভিমত, ‘‘আশা করছি, নোট বাতিলের পরে এ বার বাজেটে কেন্দ্র করছাড়-সহ আরও কিছু সুবিধার কথা ঘোষণা করতে পারে। সেটা হলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, পড়তি বাজারের সুযোগ নিতে লগ্নিকারীরা শেয়ার কিনতে শুরু করলে আপাতত পতন রোখা যেতে পারে।
তবে অনিশ্চিত বাজারে সাধারণ লগ্নিকারীদের বাজার থেকে হাত গুটিয়ে রাখতেই পরামর্শ দিয়েছেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। যদিও কমলবাবুর মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তাই পড়তি বাজারে ভাল শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করলে আখেরে মুনাফার মুখ দেখার ভাল সম্ভাবনা। তবে একই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, বাজার আর কতটা পড়ে, তা দেখে নিয়ে তার পরে শেয়ার কেনার কথা ভাবা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy