অবশেষে পরিবহণ দফতরের দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে বিদ্যুৎ দফতর।
জমি নিলাম করে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) আর্থিক হাল ফেরানোর পরিকল্পনা এ বার বাস্তবায়িত হতে চলেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৫২ বছরের পুরনো সংস্থাকে লাভজনক করে তুলতে বদ্ধপরিকর তাঁর সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এর পরেই দু’বছর আগের রিপোর্ট কার্যকর করতে নড়েচড়ে বসেছে সংস্থা।
২০১৪-র ফেব্রুয়ারি মাসে উদ্বৃত্ত জমি নিলাম করে সংস্থার আর্থিক হাল ফেরানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করে আর্থিক অনটনে জর্জরিত ডিপিএলের পরিচালন পর্ষদ। দু’বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর করার পথে এক পা-ও এগোয়নি তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বিদ্যুৎ দফতরের সর্বোচ্চ স্তরে মতানৈক্য হওয়ায় বিষয়টি থমকে যায়।
১৯৬১ সালে তৈরি এই সংস্থার আর্থিক অবস্থা বেহাল বেশ কয়েক বছর ধরেই। যার মূলে রয়েছে ঢিলেঢালা পরিচালনা। তার জেরেই মার খেয়েছে উৎপাদন ও বাজার। বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। ঋণের বোঝাও কম নয়। পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশনের কাছ থেকে ৩,৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সংস্থা। সব মিলিয়ে আর্থিক দায় বিপুল। এমনকী ঋণের টাকা ফেরত না-দিতে পারার দায়ে জানুয়ারিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় সংস্থার চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সেই জট কোনওক্রমে ছাড়ালেও ৩,৫০০ কর্মীর এই সংস্থাকে চাঙ্গা করতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা রাজ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সমস্যার সমাধানসূত্র হিসেবে সংস্থার নিজস্ব সম্পত্তি কাজে লাগানোর দিকেই নজর দিচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, দেশ জুড়েই বদলে গিয়েছে বিদ্যুতের বাজার। কয়েক বছর আগেও যা ছিল ‘সেলার্স মার্কেট’ (বিক্রেতার দিকে পাল্লা ভারী), তা এখন ‘বায়ার্স মার্কেট’ (ক্রেতার পক্ষে সুবিধাজনক)। কারণ, এখন চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি। ২০১৫-’১৬ সালে গড়ে মোট ক্ষমতার ৬১% উৎপাদন করেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি। যেখানে ৮০% -কে যথাযথ ব্যবহার বলে ধরা হয়।
তবে ডিপিএলের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। সেখানে উৎপাদন হয় ১০০ মেগাওয়াটের সামান্য বেশি। এই পরিস্থিতি বদলাতে চায় রাজ্য। বিশেষজ্ঞদের দাবি, উৎপাদন খরচ কমাতে দক্ষ হাতে সংস্থা চালানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দিকও বিবেচনা করতে হবে। এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কতটা শক্তি প্রয়োজন (স্টেশন হিট রেট), তা খতিয়ে দেখতে হবে। সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও রয়েছে। তবে এ ভাবে সংস্থা ঢেলে সাজতে চাই অর্থ। তার প্রাথমিক জোগানের জন্যই জমি বিক্রির পথে এগোতে চায় সরকার।
বাড়তি জমি কতটা, কী ভাবে তার বাণিজ্যিক ব্যবহার করা যায়, সেই পথ খুঁজতে বছর দুয়েক আগেই উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জমির ব্যবহার, একর প্রতি জনসংখ্যার চাপ ও ফ্রি ল্যান্ড বা যে-জমি এখনই বিক্রয়যোগ্য, সব কিছুই চিহ্নিত করে পরিকল্পনা তৈরি করে তারা। তাতে প্রায় ১,৪০০ একর জুড়ে তৈরি ডিপিএল চত্বরে ছ’টি প্লট নিলামের জন্য চিহ্নিত করা হয়, যেগুলিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৭২ একর জমি আছে। সরকারি সূত্রে খবর, ফাঁকা জমিগুলিই প্রথমে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল কেপিএমজি।
প্রায় ১,৪০০ একর জমি জুড়ে রয়েছে সংস্থার বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র, কর্মী আবাসন, স্কুল, জল ও বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো। রেল লাইনের দু’ধারে সংস্থার জমি ছড়িয়ে আছে। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর যেতে রেল লাইনের ডান দিকে পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও শ্রমিক আবাসন। ৪০০ একর জমি রয়েছে এখানে। রেল লাইনের বাঁয়ে ৯৫০ একর জমি আছে। এখানে রয়েছে অফিসারদের আবাসন, স্কুল, মুরগি খামার, শালবন, আমবন, বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানা, জলের পাইপলাইন ও বিদ্যুতের লাইন। প্রথম ধাপে এই ৯৫০ একর জমির মধ্যেই ছ’টি প্লট চিহ্নিত করা হয়েছে।
আর্থিক টানাটানিতে জেরবার রাজ্য রুগ্ণ সংস্থার নিত্য খরচ জোগাতে নাজেহাল। সমাধানসূত্র হিসেবে বাড়তি জমি নিলাম করে ইতিমধ্যেই সফল হয়েছে পরিবহণ দফতর। কলকাতায় ছ’টি ট্রাম ডিপোর জমি নিলামে তুলেছে রাজ্য। এ বার একই পথে হাঁটতে চাইছে বিদ্যুৎ দফতর। এত দিন লালফিতের ফাঁসে আটকে থাকা এই পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হয়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy