Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Investment

লগ্নি টানায় পিছিয়েই, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের হিসাবে প্রথম দশেও নেই বাংলা, বলছে কেন্দ্র

শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে।

পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ।

পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫৫
Share: Save:

তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে পশ্চিমবঙ্গকে শিল্পে এক নম্বরে তুলে নিয়ে আসার সঙ্কল্প করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, শিল্পে বিনিয়োগ টানা এবং তার হাত ধরে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানই এই দফায় তাঁর সরকারের পাখির চোখ। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বাস্তবে শিল্পে লগ্নির মাপকাঠিতে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে লগ্নি বাস্তবায়নের অঙ্কে প্রথম পাঁচ রাজ্যের তালিকায় থাকা তো দূর, এমনকি প্রথম দশেও জায়গা পায়নি পশ্চিমবঙ্গ।

শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। অর্থাৎ, শুধু লগ্নির ইচ্ছা প্রকাশ বা প্রাথমিক প্রস্তাব নয়, এই ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি থেকে বাস্তবে কল-কারখানা তৈরি করে উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে মাত্র ১,৬৬৩ কোটি টাকার লগ্নি এসেছে বঙ্গে। দেশে মোট বিনিয়োগের ১ শতাংশেরও কম।

সেখানে এই বিষয়ে প্রথম স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকার। দ্বিতীয় রাজ্য ওড়িশা। প্রথম পাঁচের বাকি তিন রাজ্য মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং রাজস্থান। বেশ খানিকটা এগিয়ে আর এক প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডও।

রাজ্য সরকারের শীর্ষ সূত্রের যদিও ব্যাখ্যা, ‘‘এই পরিসংখ্যান পশ্চিমবঙ্গে মোট লগ্নির ছবি তুলে ধরছে না। এটি শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের তৈরি। সব লগ্নিকারীই যে সব বিনিয়োগ ওই মন্ত্রককে জানাচ্ছেন, তা তো নয়। কারণ, তা জানিয়েও অনেক সময়ই কোনও সুবিধা মেলে না।’’

নবান্ন এই যুক্তি দিলেও বিরোধীদের অভিযোগ, প্রতি বার প্রচারের বিস্তর ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে (বিজিবিএস) বিপুল পরিমাণ লগ্নি-প্রস্তাব আসার কথা দাবি করে রাজ্য। কিন্তু সেই প্রস্তাবিত লগ্নির কতখানি আখেরে বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এর আগেও তাঁদের তরফে এ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি উঠেছে। উল্লেখ্য, এ বছরের বিজিবিএস শেষেও রাজ্য জানিয়েছিল, মোট ১৩৭টি সমঝোতাপত্র (মউ) ও আগ্রহপত্র সই হয়েছে। সেই সূত্রে প্রাথমিক ভাবে প্রস্তাবিত লগ্নির অঙ্ক ৩,৪২,৩৭৫ কোটি টাকা।

বিরোধীদের কটাক্ষ, দুর্নীতির অভিযোগে সরে যাওয়ার আগে এতদিন শিল্পমন্ত্রীর গদিতে বসে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিল্পের বদলে দুর্নীতিতেই মন দিয়েছেন বেশি। কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে তারই প্রতিফলন মিলছে। যদিও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের মতে, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা গত দু’বছরের তুলনায় ভাল। কারণ, ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৮১৭ কোটি টাকার লগ্নি বাস্তবায়িত হয়েছিল। ২০২১-এ ওই অঙ্ক ছিল ১,৯৬৭ কোটি। সেই তুলনায় চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ১,৬৬৩ কোটি টাকার লগ্নি মন্দের ভাল।

শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, কোনও শিল্প সংস্থা রাজ্যে লগ্নির প্রস্তাব করলে, একটি আইইএম (ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল আন্ত্রেপ্রেনেওরিয়াল মেমোরেন্ডামস) তৈরি করে। সেই তথ্য মন্ত্রককে জানায়। এর পরে সেই লগ্নি বাস্তবে রূপায়িত হয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে, দ্বিতীয় দফায় তা কেন্দ্রকে জানানো হয়। এই দ্বিতীয় দফায় তথ্যের ভিত্তিতেই সারা দেশে তথা প্রতিটি রাজ্যে বাস্তবে কতখানি লগ্নি হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। নবান্নের শীর্ষ সূত্রের যুক্তি, ‘‘মূলত যে সব বড় সংস্থায় এই ব্যবস্থা রয়েছে, তারাই কেন্দ্রকে লগ্নির তথ্য জানায়। ছোট-মাঝারি শিল্প সে পথে হাঁটে না। ফলে বাস্তবে লগ্নির পরিমাণ সব সময়ই আরও বেশি।’’

কিন্তু তা হলে তো সেই সূত্র অন্যন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও সত্যি? যে সমস্ত রাজ্য লগ্নি বাস্তবায়নে এগিয়ে, তাদের বাস্তবায়িত বিনিয়োগের আসল অঙ্ক তার মানে আরও বেশি হওয়ার কথা। রাজ্যের শিল্প দফতরের কর্তারা মানছেন, এই যুক্তি অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও খাটে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির পরিমাণ আদতে কিছুটা বেশি হলে, তা অন্যান্য রাজ্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো নয়। পরিসংখ্যানও বলছে, প্রায় প্রতি বছর সারা দেশে যে লগ্নি বাস্তবায়িত হয়, পশ্চিমবঙ্গ তার এক শতাংশেরও কম ভাগ পায়। প্রশ্ন উঠছে, জমি-জট, লাল ফিতের ফাঁস, ভাবমূর্তির সমস্যা এর কারণ কি না।

শিল্প দফতরের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনে আসা বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলি যাতে সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হয়, তার জন্যই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে নতুন শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা সক্রিয় হয়েছেন। জমির সমস্যা মেটাতে শিল্পতালুকে পড়ে থাকা জমি কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। যে সব সংস্থা শিল্পতালুকে জমি নিয়েছে, তাদের দ্রুত জমি কাজে লাগাতেও বলা হচ্ছে।’’ প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরে রাজ্যের ভাবমূর্তি উদ্ধারের লক্ষ্যে আরও বেশি করে শিল্পবান্ধব নীতি নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investment West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE