E-Paper

রাজ্য লগ্নি-প্রস্তাবে চতুর্থ, বাস্তবায়নে চোদ্দো নম্বরে

কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪-এর প্রথম ১১ মাসে পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৩৭৩৫ কোটি টাকার লগ্নি। অথচ প্রস্তাব ছিল ৩৯,১৩৩ কোটির। ৮৩,৪৭৬ কোটি টাকার পুঁজি টেনে গুজরাত প্রথম।

অঙ্কুর সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ০৫:০৪
মধ্যপ্রদেশে লগ্নি এসেছে প্রস্তাবের প্রায় দ্বিগুণ।

মধ্যপ্রদেশে লগ্নি এসেছে প্রস্তাবের প্রায় দ্বিগুণ। —প্রতীকী চিত্র।

কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (ডিপিআইআইটি) দফতরের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, গত বছরের জানুয়ারি-নভেম্বরে বিভিন্ন রাজ্যে শিল্পে আসা লগ্নি-প্রস্তাবের নিরিখে সারা দেশে বাংলার স্থান চতুর্থ। তার পর থেকে এ নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছে রাজ্য সরকার ও শাসক দল। তবে রিপোর্টে একই সঙ্গে দাবি, ওই সময়ে লগ্নি বাস্তবায়িত হওয়ার নিরিখে রাজ্যের ছবিটা উজ্জ্বল নয়। দাঁড়িয়ে ১৪ নম্বরে। আগে রয়েছে হরিয়ানা, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গনার মতো রাজ্য।

কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪-এর প্রথম ১১ মাসে পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৩৭৩৫ কোটি টাকার লগ্নি। অথচ প্রস্তাব ছিল ৩৯,১৩৩ কোটির। ৮৩,৪৭৬ কোটি টাকার পুঁজি টেনে গুজরাত প্রথম। উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটক পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় প্রস্তাব পেয়েছে কম টাকার। কিন্তু বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়ে। মধ্যপ্রদেশে আবার লগ্নি এসেছে প্রস্তাবের প্রায় দ্বিগুণ। ডিপিআইআইটি-র তথ্য বলছে, ২০২৩-এ এ রাজ্যে বাস্তবায়িত হয়েছিল ৪৯৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব। তার আগের বছরে ৩৭৩৫ কোটির। গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি ওই ২০২৩-এর অঙ্কই। সে বার দেশে রাজ্য ছিল ১৩ নম্বরে। অন্য দিকে, ওই পাঁচ বছরে প্রস্তাবের দিক থেকে শীর্ষে ২০২৪। ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত রাজ্যে মোট লগ্নি-প্রস্তাবের অঙ্ক যোগ করলেও তা তার ধারেকাছে আসে না।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রস্তাবের অঙ্ক যতটা ইতিবাচক, তার দশ ভাগের এক ভাগেরও কম রূপ পাওয়ার বাস্তব অনেক বেশি হতাশাজনক। ফলে এত প্রস্তাবে আদতে লাভ কী হল ভাবতে হবে। ভুল শুধরে এগিয়ে যেতে কোথায় সমস্যা হচ্ছে খুঁজে বার করা দরকার। জানতে হবে শিল্প-প্রস্তাব বাস্তবায়নের নিরিখে গত পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গ কেন প্রথম দশে ঠাঁই পেল না।

বণিকসভা ভারত চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি এন জি খেতান বলেন, ‘‘রাজ্যে সুস্পষ্ট জমি নীতি ও শিল্প নীতির অভাব আছে। এটা থাকলে, কোনও সংস্থাই লগ্নি করতে চায় না। কর্নাটক, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে সেই ঘাটতি নেই বলেই লগ্নি বাস্তবায়িত হচ্ছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের এক শিল্পকর্তার কথায়, ‘‘দাবি করা হয়, রাজ্য শিল্প টানতে সফল। কিন্তু প্রস্তাবের এত কম অংশ লগ্নি হওয়া শিল্পের আসল আবহকে তুলে ধরে। সরকার প্রচার করে প্রস্তাবের অঙ্ক। ক’টি বাস্তবায়িত হচ্ছে জানা যায় না। সম্প্রতি রাজ্য শিল্প ক্ষেত্রের সমস্ত আর্থিক উৎসাহ নীতি বাতিল করায় আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’’

শিল্প বিশেষজ্ঞ সুপর্ণ মৈত্র যদিও এই প্রবণতাকে একটি রাজ্যের সমস্যা মনে করেন না। বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে বাংলা, ওড়িশা, অসম, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের মতো রাজ্য লগ্নি প্রস্তাবে একে অপরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কারও তা বাস্তবায়িত করার মতো পরিকাঠামো আছে?’’ তাঁর বক্তব্য, সকলেই প্রচারের শীর্ষে থাকতে চায়। তাই সংখ্যার খেলা চলে। শুধু এ রাজ্য বা দেশে নয়, সারা বিশ্বেই এই ঝোঁক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

industry DPIIT

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy