Advertisement
০৮ মে ২০২৪

একার সিদ্ধান্তে নোট বাতিলই বড় ভুল, অভিযোগ চিদম্বরমের

অর্থ সচিব, ব্যাঙ্কিং সচিব এবং মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে অন্তত এই তিন জনের কথা সব থেকে বেশি মন দিয়ে শোনা উচিত ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু আদপে তা করা হয়নি বলে মোদী সরকারের দিকে ফের তোপ দাগলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

কলকাতা লিটারারি মিট-এ চিদম্বরম। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

কলকাতা লিটারারি মিট-এ চিদম্বরম। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

অর্থ সচিব, ব্যাঙ্কিং সচিব এবং মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে অন্তত এই তিন জনের কথা সব থেকে বেশি মন দিয়ে শোনা উচিত ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু আদপে তা করা হয়নি বলে মোদী সরকারের দিকে ফের তোপ দাগলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।

তাঁর দাবি, নোট নাকচের ফলে আদৌ কী লাভ হবে, তা স্পষ্ট নয় এখনও। তা ছাড়া, সব জন-ধন অ্যাকাউন্ট মারফতই যে কালো টাকা গচ্ছিত রাখা হচ্ছে, এমন মনে করারও কারণ নেই। একই সঙ্গে কংগ্রেস নেতার ইঙ্গিত, নোট নাকচের সিদ্ধান্তে সুর না-মেলানোর কারণেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদ থেকে সরতে হয়েছে রঘুরাম রাজনকে।

টাটা স্টিল আয়োজিত ‘কলকাতা লিটারারি মিট’-এ শনিবার চিদম্বরম বলেন, ‘‘নোট বাতিলের মতো এত বড় সিদ্ধান্ত ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কখনও এক জন নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে অর্থ সচিব, ব্যাঙ্কিং সচিব এবং মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা— এই তিন জনের কথা অন্তত মন দিয়ে শোনা উচিত ছিল। কিন্তু গত ৭০ দিন ধরে এই তিন জনেরই মুখে কুলুপ। অর্থাৎ, হয় তাঁরা এই সিদ্ধান্তের কথা আগাম জানতেন না, আর নয়তো এতে তাঁদের মত ছিল না।’’

ইউপিএ জমানায় অর্থ মন্ত্রকের হাল সামলানো এই কংগ্রেস নেতার মতে, সব জন-ধন অ্যাকাউন্ট দিয়েই যে টাকা নয়ছয় হচ্ছে, তা নয়। সম্ভবত এর একটা ছোট অংশই ব্যবহৃত হচ্ছে সে কাজে। একই সঙ্গে স্পষ্ট নয়, নোট নাকচের জেরে করদাতার সংখ্যা শেষমেশ কত বাড়বে। কিংবা আদৌ বাড়বে কি না। এমনকী বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে মোদী সরকার যতই ঢাক পেটাক, এ ক্ষেত্রেও যাবতীয় পদক্ষেপ ইউপিএ সরকার করেছিল বলে তাঁর দাবি।

৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের ঘোষণার পরে প্রায়ই শোনা গিয়েছে যে, এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হবেন না বলেই আগেভাগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ পদে মেয়াদ বৃদ্ধির দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন রঘুরাম রাজন। সেই জল্পনা উস্‌কে দিয়ে এ দিন চিদম্বরম বলেন, নোট বাতিলের বিরোধিতা করে মোদীকে পাঁচ পাতার চিঠি লেখেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্ণধার রাজন। কিন্তু তারপরে সরে যেতে হয়েছে তাঁকে। এবং এখন বোঝা যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতির পক্ষে এই পদক্ষেপ কত বড় ধাক্কা।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ,
নোট-বন্দির পরে নগদের জোগান স্বাভাবিক হয়নি এখনও। বিশেষত গ্রামে। অন্তত ৪০% এটিএমে পর্যাপ্ত টাকা নেই। ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার জোগাড় প্রায় ৮০ শতাংশ ছোট-মাঝারি শিল্পের। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের মাসুল গুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমপক্ষে এক শতাংশ বিন্দু কমবে বলে তাঁর ধারণা।

প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল বাজেট, বিশেষত করছাড়ের সম্ভাবনা নিয়ে। চিদম্বরম বললেন, ‘‘শুধু আয়করে কিছু ছাড় দিয়ে লাভ নেই। তার সুবিধা আর পাবেন ক’জন? বরং পরোক্ষ করের বোঝা কমলে, সুবিধা হবে সাধারণ মানুষের। চাঙ্গা হবে নোট বাতিলের জেরে ঝিমিয়ে পড়া চাহিদা।’’ একই সঙ্গে, যে কোনও মূল্যে রাজকোষ ঘাটতিকে ৩%, চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের ঘাটতিকে ১.৫% এবং মূল্যবৃদ্ধির হারকে ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।

সভায় প্রশ্ন ওঠে ঋণ খেলাপ নিয়েও। শ্রোতারা জানতে চান, বিপুল অঙ্কের ধার ব্যাঙ্কে ফেরত না-দিয়েও শিল্পপতিরা পার পাবেন কেন? চিদম্বরমের যুক্তি, ‘‘রাজন বলতেন, সব ঋণ খেলাপকে একই ভাবে দেখলে, নতুন ব্যবসা শুরু ও তার জন্য ধার পাওয়ার রাস্তা আটকাবে। এ ক্ষেত্রে কথাটি মনে রাখা জরুরি।’’ তাঁর মতে, ইচ্ছে করে ধার ফেরত যাঁরা দেননি, তাঁদের অবশ্যই কড়া সাজা হোক। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখা দরকার যে, ঋণ খেলাপ মানেই টাকা নয়ছয় নয়। অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়া, চাহিদায় ভাটা ইত্যাদি কারণে ব্যবসায় টান পড়ে। তখন কঠিন হয় ঋণ শোধ। সেই ঋণ আদায়ের জন্য সরকারকে ব্যাঙ্কের উপরই আস্থা রাখতে হবে বলে সওয়াল করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

P. Chidambaram Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE