Advertisement
E-Paper

বকেয়া-জট বহাল ডানলপে

পেটের টানে যে কোনও কাজ করে দিন গুজরানের চেষ্টা করছেন হুগলির সাহাগঞ্জ কারখানার কর্মীরা। তবে আইনি ফাঁসে ঝুলেই রয়েছে তাঁদের বকেয়া। আর, হুগলিরই হিন্দমোটরস কারখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অ্যাম্বাসাডর গাড়ির চাহিদায় ঘাটতি ও অর্থাভাবে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক বহাল থাকছে কারখানায়।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪১

পুজো কড়া নাড়ছে দরজায়। অথচ শিল্পে রাজ্যের অতীত গৌরবের সাক্ষী ডানলপ, হিন্দমোটরসের মতো কারখানার ঝাঁপ খোলার মতো কোনও সম্ভাবনা এখনও তৈরি হয়নি। বকেয়া হাতে পাননি শ্রমিকরাও।

পেটের টানে যে কোনও কাজ করে দিন গুজরানের চেষ্টা করছেন হুগলির সাহাগঞ্জ কারখানার কর্মীরা। তবে আইনি ফাঁসে ঝুলেই রয়েছে তাঁদের বকেয়া। আর, হুগলিরই হিন্দমোটরস কারখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অ্যাম্বাসাডর গাড়ির চাহিদায় ঘাটতি ও অর্থাভাবে সাসপেনশন অব ওয়ার্ক বহাল থাকছে কারখানায়।

হিন্দুস্থান মোটরস তার বার্ষিক রিপোর্টে জানিয়েছে, চাহিদায় টান, অর্থসঙ্কট-সহ বিভিন্ন কারণে ২০১৪ সালে উত্তরপাড়ায় সাসপেনশন অব ওয়ার্ক-এর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় তারা। সে অবস্থার কোনও বদল হয়নি। লাভের আশা নেই। তাই কারখানা বন্ধ থাকছে। যদিও খরচ কমানো কিংবা নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজার মতো প্রয়াসও চলছে বলে সংস্থার দাবি। গত ফেব্রুয়ারিতে সংস্থা তার অ্যাম্বাস্যাডর ব্র্যান্ড ফরাসি গাড়ি সংস্থা পুজো-কে বিক্রি করে দেয়। এখানেও শ্রমিকের বকেয়া অমিল, যদিও সি কে বিড়লা গোষ্ঠী পরিচালিত কারখানা কর্তৃপক্ষকে বিআইএফআর আদেশ দিয়েছিল বকেয়া পাওনা মেটাতে। পুজোর মুখে ডানকুনির কোল ইন্ডিয়ার পরিস্থিতিও ভাল নয়।

গত বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাহাগঞ্জের ডানলপ কারাখানা অধিগ্রহণ করে। বিধানসভায় বিল পাশ হয়। রাজ্য তা অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়। সেই অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনও অসম্পূর্ণ। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক জানান, রাজ্যের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ। বিষয়টি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে ডানলপের মালিক পবন রুইয়া জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এ বছরেই লিকুইডেটরের হাতেও গিয়েছে ডানলপ।

এই সব প্রক্রিয়ার মাঝে ডানলপের পাওনাদারেরা হাইকোর্টের একটি আদেশের প্রসঙ্গ তুলেছেন, যেখানে কর্তৃপক্ষকে ডানলপের সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা মেটানোর কথা বলা হয়েছে। লিকুইডেটররা সেটি কারখানায় নোটিসের আকারে ঝুলিয়ে দেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ডানলপের শ্রমিক বা পাওনাদারদের বকেয়া কে মেটাবে? এই পর্বের আগে চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্র হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীও ডানলপের আবেদনকারী অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু এই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী আদালতকে জানান, ডানলপ অধিগ্রহণ আইনে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া টাকা মেটানোর সংস্থান নেই। বিচারপতি অবশ্য রাজ্য সরকারকেই দায়িত্ব দেন শ্রমিকদের বকেয়া মেটাতে।

তবে বিচারপতি যে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তা জুনে শেষ হয়েছে। বকেয়া মেলেনি। চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা অধিগ্রহণ আইনে বকেয়া মেটানোর আইনি অধিকারকে যুক্ত করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রীকেও জানিয়েছি। আইএনটিটিইউসি-র হুগলি জেলা সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত বলেন,“ডানলপে অল্প কিছু শ্রমিক সরকারি অনুদান পান। সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক বকেয়ার জন্য বহু বছর ঘুরছেন। সুরাহা নেই। হিন্দমোটর শ্রমিকদেরও বেহাল পরিস্থিতি।”

এই পরিস্থিতির অন্যতম সাক্ষী লক্ষ্মীনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। মাত্র দু’মাস বাকি ছিল অবসর নেওয়ার। কিন্তু তার আগেই মুখের উপর ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় ডানলপের। ধাক্কা সামলাতে পারেননি। সেরিব্রাল স্ট্রোকে তিনি কাবু। ব্যান্ডেল কেওটার অসীম চট্টোপাধ্যায় ডানলপের বায়োমেট্রিক বিভাগে টানা ৩৮ বছর কাজ করেছেন। অবসরের পরে মেলেনি বেশ কয়েক লক্ষ টাকার পাওনা।

এর মধ্যেই প্রতি বছর পুজো আসে, পুজো যায়। তার রোশনাই ছুঁতে পারে না এই সব শ্রমিককে।

Dunlop India LTD arrears
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy