Advertisement
E-Paper

কড়ি ফেললে ভাল পরিষেবা ভারতেও মিলবে ইউটিউবে

ফেলো কড়ি মাখো তেল। ভারতের জন্য এ বার পেড সার্ভিস বা টাকার বিনিময়ে পরিষেবার কথা ভাবছে ইউটিউব। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বিনামূল্যে ভিডিও দেখার যে-সুযোগ রয়েছে, তার পাশাপাশিই উন্নত পরিষেবা মিলবে এই ‘ইউটিউব রেড’ পরিষেবায়, যেখানে বিজ্ঞাপনের কোনও জায়গা নেই। অর্থাৎ কোনও রকম ব্যাঘাত ছাড়াই টানা দেখা যাবে ভিডিও।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৬

ফেলো কড়ি মাখো তেল।

ভারতের জন্য এ বার পেড সার্ভিস বা টাকার বিনিময়ে পরিষেবার কথা ভাবছে ইউটিউব। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বিনামূল্যে ভিডিও দেখার যে-সুযোগ রয়েছে, তার পাশাপাশিই উন্নত পরিষেবা মিলবে এই ‘ইউটিউব রেড’ পরিষেবায়, যেখানে বিজ্ঞাপনের কোনও জায়গা নেই। অর্থাৎ কোনও রকম ব্যাঘাত ছাড়াই টানা দেখা যাবে ভিডিও। সেই সঙ্গে নিজেদের মুনাফা বাড়ানোও লক্ষ্য ইউটিউবের।

ইন্টারনেট ও মোবাইল। জেনারেশন নেক্সট-এর এই প্রাণভোমরাকে হাতিয়ার করে বিশ্ব জুড়ে বিনোদনের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে ইউটিউব। বলিউড নিয়ন্ত্রিত ভারতীয় বিনোদন জগতেও তার আঁচ লেগেছে। লাফিয়ে বেড়েছে ইউটিউবের দর্শক সংখ্যা। শুধুমাত্র নেট যোগাযোগ থাকলেই দর্শকের মুঠোয় চলে আসছে দশ হাজার হিন্দি-সহ অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় তৈরি ফিল্ম ও আড়াই লক্ষ গানের ভাণ্ডার। বিনামূল্যে।

কিন্তু আরও উন্নত পরিষেবার চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতীয় বিনোদনের ভোল বদলে দেওয়া এই পরিষেবা এ বার ঢেলে সাজছে ইউটিউব। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বিনামূল্যে ভিডিও দেখার সাধারণ পরিষেবা ছাড়াও থাকবে টাকার বিনিময়ে উন্নত পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ। তবে তা চালু হওয়ার দিন-ক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

বিদেশে কড়ির বিনিময়ে ইউটিউব পরিষেবা আগেই চালু হয়েছে। ২০১৪-এ তা শুরু হয় ‘ইউটিউব রেড’ মারফত। প্রথমে গান ও গানের ভিডিও নিয়ে ইউটিউব রেড চালু হয়। এই পরিষেবায় ভিডিও ডাউনলোড করে তা নিজের মোবাইল বা কম্পিউটারে ‘সেভ’ করে রাখা যায়। পরে নেট পরিষেবা ছাড়াই তা দেখা সম্ভব। ইউ টিউব রেড-এর গ্রাহক একই অ্যাপ দিয়ে ইউটিউব মিউজিক, ইউটিউব গেমিং ও ইউটিউব কিড্‌স-এর পরিষেবা পাবেন। ভারতে ‘পেড সার্ভিস’ ঠিক কোন ধাঁচে তৈরি হবে, তা নিয়ে মুখ খোলেনি সংস্থা। তবে ব্যবসা বাড়াতে অর্থের বিনিময়ে এই পরিষেবা চালু যে জরুরি, তা স্পষ্ট করেছে তারা।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে তৈরি হয় ভিডিও ‘শেয়ার’ করার মঞ্চ ইউটিউব। পে প্যাল-এর তিন প্রাক্তন কর্মীর তৈরি এই সংস্থার বিপুল সম্ভাবনা বুঝতে দেরি করেনি বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন গুগ্‌ল। ২০০৬ সালে ইউটিউব-কে কিনে নেয় গুগ্‌ল। ১৬৫ কোটি ডলার দাম দিয়ে।

গত দশ বছর ধরে ইউটিউব-এর জনপ্রিয়তা আকাশ ছুঁয়েছে। তৈরি হয়েছে একাধিক সাফল্যের গল্প। শুধুই টেলিভিশন-ফিল্মে গান গেয়ে বা অভিনয় করে তারকা হওয়া নয়। ইউটিউবের দৌলতে সাধারণ মানুষও নিজেদের সৃষ্টি নিয়ে হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। তৈরি হয়েছে ইউটিউব তারকা। তৈরি হয়েছে নতুন প্রজন্মের স্রষ্টা। ইউটিউব-এর ভাষায় যাঁদের নাম ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’। নিজের সৃষ্টি বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এঁরা বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা রোজগার করেছেন। সংস্থার দাবি, এ পর্যন্ত ২০০ কোটি ডলার ব্যবসা করেছেন ইউটিউবের স্রষ্টারা।

তবে অন্যদের ব্যবসার সুযোগ তৈরি হলেও নিজেদের ব্যবসা তেমন ভাবে লাভজনক করে তুলতে পারেনি ইউটিউব। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে তাদের মোট ব্যবসা ছিল ৪০০ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভাল লাভের মুখ দেখতেই অর্থের বিনিময়ে পরিষেবা দেওয়ার পথে হাঁটছে ইউটিউব।

একই সঙ্গে রয়েছে প্রতিযোগিতার চাপ। গত ১০ বছর ধরে ভিডিও পরিষেবার বাজারে রাজত্ব করেছে ইউটিউব। এ বার সেই বাজারেও ভিড় জমছে। ভাগ বসাতে চাইছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, ফেসবুক। অ্যামাজন অবশ্য এখনও তাদের ভিডিও পরিষেবা ভারতে চালু করেনি। কিন্তু ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা সংস্থার সংখ্যা কম নয়। যে-কারণে ইউটিউব বাড়তি নজর দিচ্ছে উন্নত পরিষেবার দিকে।

প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ইউটিউবের বাজি আঞ্চলিক বাজার। ১০ বছরের আধিপত্য বজায় রাখতে এ বার আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি বিভিন্ন বিনোদনের মসলাকেই পাখির চোখ করছে তারা। আর, নয়া এই কৌশলে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলা ভাষা। এই প্রথম কলকাতায় ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’-দের নিয়ে কর্মশালা করল সংস্থা। কমেডি, শর্ট ফিল্ম থেকে সিরিয়াল— ইউটিউবের নজরে উঠে এসেছে বিনোদনের সব উপাদান। সংস্থার ‘এনটারটেনমেন্ট কনটেন্ট’ বিভাগের প্রধান সত্য রাঘবনের দাবি, ইউটিউবের মোট বাজারের ৪০% আঞ্চলিক ভাষার দখলে। এর মধ্যে তামিল, তেলুগুর মতো দক্ষিণী ভাষারই প্রাধান্য। বাংলা ভাষাতেও তৈরি হচ্ছে বিনোদনের জনপ্রিয় উপকরণ। তিনি বলেন, ‘‘শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বাংলা ভাষার বিনোদনের দর্শক। বাংলাদেশ-সহ বিদেশের বিভিন্ন কোণে এর চাহিদা বাড়ছে।’’

হিন্দি বা দক্ষিণী ভাষার তুলনায় নেট দুনিয়ায় বাংলা ভাষায় তৈরি বিনোদনের সংখ্যা এখনও কম। বাংলা ভাষা ঘিরে আবেগের অঙ্কটা একটু দেরিতেই কষেছে টলিউড। এখন অবশ্য নতুন প্রজন্মের প্রযোজকরা শুধু দেশের মধ্যে বাজার আটকে রাখতে চান না। বিদেশ-বিভুঁইয়ের বাঙালিদের দিকে তাকিয়ে অনলাইন বিপণনের পথ বেছে নিতে পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা। নেটের হাত ধরে কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সের সীমানা টপকে নিউ ইয়র্ক বা লন্ডনের বাঙালি বৈঠকখানায় পৌঁছচ্ছে নতুন নতুন ফিল্ম।

টলিউড ও বাংলায় তৈরি বিনোদন বিপণনের এই নতুন আঙ্গিকে ঢুকে পড়তে চায় ইউটিউব। বিশ্ব জুড়ে দু’কোটিরও বেশি বাঙালি ছড়িয়ে। শিকড় থেকে দূরে থেকেও তার সঙ্গে যোগসূত্র রাখতে যাঁরা মরিয়া। যাকে পুঁজি করে বাজারে ঝাঁপাচ্ছে ইউটিউব।

Youtube Paid service
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy