উল্টো পথে ঘুরে অবশেষে পড়ল শেয়ার বাজার। টানা বৃদ্ধিতে ছেদ টেনে এক ধাক্কায় সেনসেক্সের পতন হল ৩৪৮ পয়েন্ট। গত ২৭ জানুয়ারির পর এতখানি পতন শেয়ার বাজার দেখেনি। শুক্রবার সপ্তাহের শেষ লেনদেনে বাজার বন্ধের সময়ে সূচক থেমেছে ২৫,২২৮.১৭ অঙ্কে।
এ দিন বড় ধরনের পতন হয়েছে টাকার দামেও। ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে টাকার দাম পড়েছে ৫২ পয়সা। এর ফলে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৭৭ টাকা। অন্যতম তেল উৎপাদক ইরাকে জাতি-দ্বন্দ্ব ও জঙ্গি হানার জেরে পরিস্থিতি এ দিন ঘোরালো হয়ে ওঠে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে আকাশপথে হানা চালানো হতে পারে জঙ্গি-অধ্যুষিত এলাকার উপর, যদিও এখনই ইরাকে সেনা পাঠানোর কথা ভাবছেন না তিনি।
জঙ্গিরা ইরাকের রাজধানী বাগদাদের মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে, এসে যাওয়ার খবরে এ দিন লাফিয়ে বাড়তে থাকে অশোধিত তেলের দাম। গত ন’মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়ে ব্রিটেনের বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্টের দাম পৌঁছে যায় ব্যারেলে ১১৫ ডলারে। ইরাকে সংঘর্ষের জেরে ব্যাহত হতে পারে ইরাক থেকে অসোধিত তেল আমদানি। সে ক্ষেত্রে দাম আরও বাড়লে ভারতকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কিনতে বিদেশি মুদ্রা আরও বেশি করে খরচ করতে হবে। এর ফলে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যেতে পারে, এই ধারণাই এ দিন টাকার দামের পতনের পিছনে কাজ করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আপাতদৃষ্টিতে এই ঘটনা লগ্নিকারীদের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি করে, যা টেনে নামায় শেয়ার সূচককে। তাঁরা আশঙ্কা করেন, তেল আমদানি খাতে বিদেশি মুদ্রার বাড়তি খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে বাণিজ্য ঘাটতিকে, যা অর্থনীতির হাল ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই পরিস্থিতিতে লগ্নিকারীরা শেয়র বেচতে শুরু করে দেন।
তবে ইরাকের ঘটনাই কি শেয়ার দরের পতনের এক মাত্র কারণ? বিশেষজ্ঞরা কিন্তু আদৌ তা মনে করছেন না। দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁরা বলে আসছেন যে, বাজারের মৌলিক উপাদানগুলির কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন না-হওয়া সত্ত্বেও এ দেশে শেয়ার দরের এই টানা বৃদ্ধি মোটেই স্বাভাবিক নয়। তাই শেয়ার দরের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রবীণ শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, “সেনসেক্স কোনও বাধা ছাড়াই প্রায় ৩ হাজার পয়েন্ট বেড়েছে। অবিলম্বে এর একটা সংশোধন বা ‘কারেকশন’ জরুরি। এ দিন শেয়ার দরের পতনকে আমি সেই কারেকশনেরই শুরু বলে মনে করছি। সেনসেক্স আরও ৮০০ বা ৯০০ পয়েন্ট পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
একই মত প্রকাশ করেছেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং বাজার বিশষেষজ্ঞ এস কে কৌশিক। তিনি বলেন, “আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি সূচকের এতখানি বৃদ্ধির পিছনে কোনও যুক্তি নেই। সেনসেক্স আরও হাজার খানেক পয়েন্টের মতো পড়লে বাজার শক্ত জমির উপর দাঁড়াবে বলে আমার ধারণা।”
তবে একটা ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের প্রায় সকলেই একমত যে, সংশোধনের পরে বাজার ফের উঠবে। এই কারেকশন বাজেট পেশ হওয়া পর্যন্ত চলবে বলেই তাঁদের ধারণা। তাই বাজেট কেমন হয়, সে দিকেই এখন তাকিয়ে শেয়ার বাজার মহল। তবে বাজেটের পাশাপাশি বর্ষাও বাজারের গতিকে অনেকটাই নির্ধারিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy