এ বার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করা যাবে টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেও।
এত দিন টেলিকম সংস্থাগুলির দাবি ছিল, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর বা ওই আদালত বা ফোরামের তাদের উপর এক্তিয়ার নেই। এ নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট) সম্প্রতি তার উত্তরে জানিয়েছে, অন্য সংস্থার ক্ষেত্রে যেমন হয়, তেমনই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতগুলির সেই যোগ্যতা রয়েছে। টেলিকম সংস্থা বলতে এখানে যেমন ধরা হবে বিএসএনএলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে, তেমনই বেসরকারি টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের মামলা গ্রাহ্য হবে।
সাধারণ ভাবে ক্রেতা সুরক্ষার প্রশ্নে অভিযোগের দু’ভাবে নিষ্পত্তি হয়। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায় অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক মেটানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী ‘সেল’ রয়েছে। কোনও অভিযোগ এলে গোড়ায় সেই সেল-এর মাধ্যমে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয়।
এই পদ্ধতিতে ফল না-মিললে অথবা সরাসরি যে কেউ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে পণ্য বা পরিষেবায় প্রতারণার অভিযোগ জানাতে পারেন। দফতর সূত্রের খবর, অন্য অভিযোগের মতোই টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধেও বহু অভিযোগ আসে। কখনও কখনও বছরে তা একশোরও বেশি। সেল-এ টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ওঠা অনেক অভি- যোগের নিষ্পত্তি হলেও সমস্যা হয় আদালতে মামলা দায়ের হলেই।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের বক্তব্য, মামলা হলে তার এক্তিয়ার নিয়ে এত দিন প্রশ্ন তুলত সংস্থাগুলি। সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার রায় উল্লেখ করে সংস্থাগুলির দাবি ছিল, ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ আইনের ৭বি ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক ব্যবস্থা থাকায় তাদের ক্ষেত্রে ক্রেতা সুরক্ষা আইন প্রযোজ্য নয়। এই বিতর্কের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের সচিব বিবেক ভরদ্বাজ আইনের ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরকে চিঠি দেন। সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফোনে তিনি জানান, এক্তিয়ারের প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত সেই সব মামলা ক্রেতা আদালতে খারিজ হয় যেত। পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে ছিল একই ছবি। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে সম্প্রতি বলেন, “টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলি ওই আইনি যুক্তি দেখিয়ে অভিযোগ এড়িয়ে যেত। কিন্তু ডট জবাবে জানিয়েছে, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে এই ধরনের অভিযোগও জানানো যাবে।”
নির্দেশে কী বলেছে ডট?
কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রকের অধীন ডটের অন্যতম ডিরেক্টর (পি অ্যান্ড আরবি) আনন্দ অগ্রবাল সম্প্রতি তাঁর নির্দেশে স্পষ্ট বলেছেন, জেলার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতগুলি গ্রাহক ও টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলির মধ্যে বিরোধের অভিযোগ শোনার সর্ম্পূণ যোগ্য। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে, সে সময়ে ডট টেলিকম পরিষেবা সংস্থা ছিল। তখনও পৃথক পরিষেবা সংস্থা বিএসএনএল গঠিত হয়নি। এবং যেহেতু ডট টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষও হিসেবেও পরিচিত ছিল, সেই সূত্রেই আইনের ৭বি ধারার উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বেসরকারি পরিষেবা সংস্থা বা বিএসএনএল-এর উপর ডট-এর কোনও অধিকার নেই। তাই ৭বি ধারার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়। উপরন্তু সর্বোচ্চ আদালতেরই এই মামলাটি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতেই বিবেচ্য।
ডট তার নির্দেশে আরও বলেছে, জাতীয় টেলিকম নীতি ২০১২-তে ইন্ডিয়ান টেলিগ্রাফ আইন সংশোধনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তাতে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকেই এ ধরনের অভিযোগের এক্তিয়ার দেওয়া রয়েছে। ফলে এ জন্য আর আলাদা করে অর্ডিন্যান্সের প্রয়োজন নেই বসে মনে করছে ডট। সার্বিক ভাবে তাদের এই অবস্থানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রকের সচিব, রাজ্যগুলির মুখ্য সচিব ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসকদের জানিয়ে ডট তাদের সংশ্লিষ্ট ক্রেতা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy