আর্থিক বুনিয়াদ মজবুত হওয়ায় গ্রাহকদের লগ্নি আরও সুরক্ষিত হবে ঠিকই। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া নির্দেশিকা কার্যকর হলে, অনেক ছোট এনবিএফসি-রই (ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থা) টিকে থাকতে নাভিশ্বাস উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চাপ বাড়বে বড় সংস্থাগুলির উপরেও।
পিয়ারলেস জেনারেল ফিনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে মুখোটি বলেন, “নয়া নিয়ম মানতে গিয়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বেশ কিছু এনবিএফসি। তবে যেগুলি টিকে থাকতে পারবে, তাদের আর্থিক ভিত যে-মজবুত হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।”
ম্যাগমা ফিনকর্পের চিফ স্ট্র্যাটেজিক অফিসার কৈলাশ বাহেতির কথায়, “নতুন নিয়ম মানতে গেলে, এক দিকে আর্থিক সংস্থান বাবদ আগের থেকে অনেক বেশি টাকা সরিয়ে রাখতে হবে। অন্য দিকে, বাড়াতে হবে মূলধনও। দু’য়ের জাঁতাকলে পড়ে চাপ বাড়বে এনবিএফসিগুলির উপর।”
উল্লেখ্য, গত সোমবারই এনবিএফসিগুলির জন্য নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সেখানে বলা হয়েছে, এ বার থেকে ওই সংস্থাগুলির নিট নিজস্ব তহবিল (নেট ওন্ড ফান্ড বা এনএফও) হতে হবে অন্তত ২ কোটি টাকা। যেখানে এখন সেই তহবিল ২৫ লক্ষ টাকা হলেই এনবিএফসি হিসেবে নথিবদ্ধ হতে পারে কোনও সংস্থা। ফলে এখন যে-সমস্ত সংস্থার ২৫ লক্ষ টাকার তহবিল রয়েছে, তিন বছরের মধ্যে আরও ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা লগ্নি করতে হবে তাদের। আর তা যদি তারা করতে না-পারে, তবে বাতিল হয়ে যাবে নথিভুক্তি (রেজিস্ট্রেশন)।
নয়া নিয়মে আরও কড়া করা হয়েছে বাজার থেকে আমানত সংগ্রহের নিয়মটিও। যে-সব এনবিএফসি-র বাজার থেকে আমানত সংগ্রহের অনুমতি আছে, পুরনো নিয়মে নিজেদের নিট নিজস্ব তহবিলের ৪ গুণ টাকা তুলতে পারত তারা। কিন্তু নতুন নিয়মে তা তোলা যাবে মাত্র ১.৫ গুণ। তাই কোনও সংস্থা আমানত সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে চাইলে, আগে এনএফও-র পরিমাণ বাড়াতে হবে তাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে এনবিএফসি-তে বিনিয়োগ আরও বেশি সুরক্ষিত হবে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে মূলধন জোগাড় করতে গিয়ে হিমসিম খাবে সংস্থাগুলি।
নির্দেশিকায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, এখন থেকে কোনও ঋণের আসল বা সুদ ৯০ দিন ধরে পাওয়া না-গেলেই তাকে অনুৎপাদক
সম্পদের খাতায় দেখাতে হবে এনবিএফসিগুলিকে। ঠিক ব্যাঙ্কের মতো। পুরনো নিয়মে তাদের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ছিল ১৮০ দিন।
তা ছাড়া, যে-সব ঋণের টাকা সময়ে শোধ হচ্ছে, তার জন্যও আর্থিক সংস্থানের (প্রভিশনিং) পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। পুরনো নিয়মে ওই ধরনের ঋণের ০.২৫% টাকা তুলে রাখতে হত। কিন্তু এ বার নতুন নিয়মে ২০১৮ সালের মধ্যে তা পর্যায়ক্রমে নিয়ে যেতে হবে ০.৪০ শতাংশে।
এ প্রসঙ্গে শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্সের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হেমন্ত কানোরিয়ার দাবি, যে-সব এনবিএফসি বাজার থেকে আমানত সংগ্রহ করে না, তা হলে এ বার তা করার সুযোগ দেওয়া উচিত তাদেরও। তাঁর কথায়, “ব্যাঙ্কের মতো একই ভাবে যখন অনুৎপাদক সম্পদ চিহ্নিত করার নিয়ম এনবিএফসি-র ক্ষেত্রেও চালু করা হল, তখন ওই সব সংস্থাকে ব্যাঙ্কের মতো আমানত সংগ্রহেরও সুযোগ দেওয়া উচিত।” তাঁর দাবি, “সব বড় এনবিএফসি-র ক্ষেত্রেই একই রকম নিয়মের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যে-সব সংস্থা দেশের পরিকাঠামোয় লগ্নি করছে, তাদের জন্য নিয়ম আলাদা হওয়া উচিত।”
তবে যে-সব এনবিএফসি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ আঁচ করে আগে থেকেই এই সমস্ত বিষয় অন্তত আংশিক ভাবে কার্যকর করে রেখেছে, এখন তারা অপেক্ষাকৃত স্বস্তিতে থাকবে বলে মনে করছেন কৈলাশবাবু। ম্যাগমা ফিনকর্প তেমনটাই করেছে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy