রান্নার গ্যাস বুক করেছেন মাসখানেক হতে চলল। কিন্তু এখনও মেলেনি সিলিন্ডার। ওদিকে চালু সিলিন্ডার প্রায় শেষের মুখে। পুজোর আর ক’দিন বাকি। এর মধ্যে গ্যাস না-পেলে পুজোর সময়ে কী হবে?
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু রান্নার গ্যাস গ্রাহকের এখন এই দশা। এ নিয়ে ডিস্ট্রিবিউটর বা ডেলিভারি-বয়-কে বলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। গ্রাহকদের অনেকেরই অভিযোগ, অগস্টের শেষে গ্যাস বুক করেও এখনও তা মেলেনি। কেউ কেউ আবার গ্যাস না-পেলেও সরবরাহ (ডেলিভারি) হয়ে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে এসএমএস পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। গ্যাস সরবরাবহকারী তেল সংস্থা বা ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশ সমস্যার কথা মেনেও নিয়েছেন। তবে তাদের দাবি, তা সাময়িক।
গ্যাস সরবরাহে শ্লথগতির কারণ হিসেবে এক এক রকম যুক্তি উঠে আসছে। প্রথমত, তথাকথিত ‘কাটা-গ্যাস’-এর রমরমা নিয়ে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকদের একাংশ। যা দিয়ে অটো, এমনকী গ্রামাঞ্চলে ছোট যাত্রী-গাড়িও চলছে বলে অভিযোগ। কেউ কেউ সাদা চোখেই বুঝতে পারছেন, এই ভাবেই রান্নার গ্যাস নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়ে গিয়েছে। তা কাটা-গ্যাস হিসেবে বা বাড়তি টাকা দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে হেঁসেলের জায়গায় রান্নার গ্যাস সেখানে চলে যাওয়ায় সাধারণ গৃহস্থের ভাঁড়ারে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ইন্ডেন-এর বিভিন্ন গ্যাস শোধনাগারে কর্মীদের ধীরে-চলো আন্দোলনের জেরেও সিলিন্ডার জোগান কিছুটা শ্লথ হয়েছে বলে অভিযোগ। যার প্রভাব সম্প্রতি বাজারে পড়তে শুরু করেছে।
তৃতীয়ত, সংস্থাগুলিকে প্রায়ই সিলিন্ডার কিনতে হয়। ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি, ইন্ডেনের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার কেনার বরাত প্রক্রিয়া বাতিল হয়েছিল। এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। ‘অ্যাড-হক’ ব্যবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও সার্বিক ভাবে সংস্থা যথাযথ পরিকল্পনা না-নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
কাটা-গ্যাসের সমস্যার কথা মানলেও বিভিন্ন তেল সংস্থার দাবি, তার প্রভাব কখনওই এতটা পড়বে না যে, গ্যাস বুক করে তা পাওয়ার সময়সীমা অনেক বেড়ে যাবে। যেমন ইন্ডেন-এর এক কর্তার দাবি, সমস্যাটা আসলে গ্যাসের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার। তাঁর হিসেবে, গত ১ থেকে ২৫ অগস্ট মোট ২৭.৩০ লক্ষ গ্রাহক গ্যাস বুক করেছিলেন। এর পর ১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০.২৩ লক্ষ। এই প্রায় তিন লক্ষ গ্রাহকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহের সময়সীমা সাধারণ নিয়মের (৫-৭ দিন) চেয়ে আরও ৩-৪ দিন বেড়ে যায়।
কিন্তু গ্রাহকদের একাংশ প্রায় এক মাস আগে বুক করেও কেন গ্যাস পাননি এখনও? সংস্থার দাবি, এটা কিছু ডিস্ট্রিবিউটরের ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে সার্বিক ছবিটা এত খারাপ নয়। ভারত পেট্রোলিয়ামের দাবি, তারা দু’তিন দিনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-১২ দিন।
কিন্তু হঠাৎ করে এই সময়েই কেন ‘বুকিং’ বেড়ে গেল? সংস্থাগুলির দাবি, পুজোর সময়ে সাধারণত চাহিদা বাড়ে। অনেকেরই বাড়িতে বাড়তি গ্যাস লাগে। আবার কেউ বেড়াতে যাওয়ার আগে নতুন সিলিন্ডার রেখে যেতে চান। পুজোর সময়ে কিছু দিন ছুটি থাকায় গ্যাস না-পাওয়ার আশঙ্কায় আগাম বুক করেও রাখেন অনেকে। ফলে হঠাৎই বাজারে একটা কৃত্রিম চাহিদা তৈরি হয়।
আর এক তেল সংস্থার কর্তার দাবি, সাধারণ ভাবে বছরে ১২টি গ্যাস বেশির ভাগ গ্রাহকেরই লাগে না। অল্প কিছু সংখ্যক গ্রাহকের তা দরকার হলেও হিসেব কষেই দেখা গিয়েছে সিংহভাগের চাহিদা অনেক কম। এই মুহূর্তে সব গ্রাহকের পরিবারকে দ্রুত ১২টি সিলিন্ডারের জোগান নিশ্চিত করাও সম্ভব নয়। আবার পরিবার পিছু একটি অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার ১২টি সিলিন্ডার বরাদ্দ করায় যাঁদের তা লাগে না, সেই সব সিলিন্ডারই কাটা-গ্যাস বিক্রিতে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে মনে করছেন তেল সংস্থাগুলির কেউ কেউ।
‘ব্যাকলগ’ বা গ্যাস বুক করে তারপর অনেক দেরিতে সিলিন্ডার পাওয়ার কথা মানছেন ইন্ডেন ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের (পশ্চিমবঙ্গ) কর্তা বিজনবিহারী বিশ্বাসও। তবে তাঁর দাবি, দক্ষিণবঙ্গের ৬০% এলাকায় গ্যাস পেতে সপ্তাহ দুয়েক লাগছে। বাকি এলাকায় মাস খানেকের কাছাকাছি। তাঁর দাবি, ১২টি গ্যাস বছরের যে-কোনও সময়ে কেনা যাবে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে অনেকেই খূব দ্রুত একাধিক সিলিন্ডার বুক করছেন। তার কিছু কাটা-গ্যাসে চলে যাচ্ছে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
সব মিলিয়ে বাড়তি চাহিদা, কাটা-গ্যাসের রমরমা ও সংস্থার নিজস্ব প্রক্রিয়াগত সমস্যার জেরেই রান্নার গ্যাসের জোগানে কিছুুটা দেরি হচ্ছে বলে দাবি সংস্থাগুলির। তবে তেল সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি, পুজোর পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবকি হবে। আপাতত সেই আশায় ভর করেই হেঁসেল সামলাতে হবে গ্রাহকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy