Advertisement
E-Paper

বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি পেট্রোকেমে

প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পরে নতুন করে খোলার পথে পা বাড়াল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস। এই লক্ষ্যে আজ বুধবার থেকেই যন্ত্রপাতি পরিষ্কারের কাজ (ক্লিন আপ) শুরু হয়েছে সেখানে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, বাজারে পেট্রোকেমের পণ্যও এসে যাবে চলতি মাসের মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২২

প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পরে নতুন করে খোলার পথে পা বাড়াল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস। এই লক্ষ্যে আজ বুধবার থেকেই যন্ত্রপাতি পরিষ্কারের কাজ (ক্লিন আপ) শুরু হয়েছে সেখানে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, বাজারে পেট্রোকেমের পণ্যও এসে যাবে চলতি মাসের মধ্যে।

আজ প্রায় সাত মাস পেট্রোকেমের কারখানার দরজা বন্ধ। সংস্থা সূত্রে খবর, এ ধরনের উৎপাদন রাতারাতি চালু করা সম্ভব নয়। তার আগে সাত দিন পরীক্ষামূলক উৎপাদন (ড্রাই রান) জরুরি। একমাত্র তবেই পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সেই প্রক্রিয়া চালুর প্রথম ধাপ হিসেবেই এ দিন যন্ত্রপাতি পরিষ্কারের কাজ হয়েছে পেট্রোকেমে। তবে সংস্থা সূত্রে দাবি, তাদের তৈরি পণ্য ফের বাজারে হাজির হবে চলতি মাসের মধ্যেই।

পেট্রোকেম খোলার রাস্তা অবশ্য সাফ হয়ে গিয়েছিল চলতি মাসের গোড়াতেই। গত ৩ জানুয়ারি সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে শেষ পর্যন্ত পেট্রোকেমে টাকা ঢালতে রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছিল আর্থিক সংস্থাগুলি। ওই বৈঠকে সংস্থায় এখনই ১০০ কোটি টাকা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। আর তারপরেই ধুঁকতে থাকা পেট্রোকেমে লগ্নির কথা জানিয়েছিল আর্থিক সংস্থাগুলি। প্রাথমিক ভাবে ৭০০ কোটি টাকা ঢালার দায় নিয়েছিল তারা।

যা পরিস্থিতি, তাতে সব মিলিয়ে অন্তত ২,০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন পেট্রোকেমের। কিন্তু আর্থিক সংস্থাগুলি জানিয়েছিল যে, এক লপ্তে তারা তা ঢালবে না। প্রথম কিস্তিতে দেবে ৭০০ কোটি টাকা। তার সঙ্গে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর ১০০ কোটি মিলিয়ে মোট ৮০০ কোটি পুঁজি করে কারখানা চালু হবে। তারপরে বরং সংস্থার কাজ যাচাই করে বাকি টাকা বিভিন্ন কিস্তিতে দেওয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছিল তারা। ফলে সব মিলিয়ে, ফের পেট্রোকেম খোলার রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল তখনই।

পেট্রোকেমে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ন্যাপথার দাম এই মুহূর্তে বেশ কম। আবার তা ব্যবহার করে সংস্থাটি যে সব পণ্য তৈরি করে, তাদের বাজার বেশ ভাল। পেট্রোকেমের পণ্যের গুণমান নিয়ে যথেষ্ট ভাল ধারণাও আছে বাজারে। ফলে সব মিলিয়ে আর্থিক সংস্থাগুলির আশা, এই সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে, সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর পথ অনেকটাই মসৃণ হবে।

রাজ্যের অন্যতম ‘শো-পিস’ এই কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে গত বছর যান্ত্রিক ত্রুটির তত্ত্ব খাড়া করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি ছিল, মূলত কার্যকরী মূলধনের অভাবেই আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে পেট্রোকেম। আর সেই কারণেই কারখানা বন্ধের ওই সিদ্ধান্ত। পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সেই সমস্যা আপাতত কিছুটা মেটায় স্বাভাবিক ভাবেই পেট্রোকেম খোলা নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছিল।

নতুন বছরের গোড়ায় পেট্রোকেম খোলার ব্যাপারে অবশ্য ইঙ্গিত মিলেছিল তার আগেই। আনন্দবাজারকে এক সাক্ষাৎকারে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, এই অর্থবর্ষের মধ্যেই তিনি পেট্রোকেম খোলার বিষয়ে আশাবাদী। কারণ, সংস্থা বন্ধ থাকলে, আখেরে সব পক্ষেরই ক্ষতি বলে মনে করেন তাঁরা। তবে তখন পেট্রোকেম খোলার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলতে রাজি হননি তিনি।

সংস্থার দরজা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছিল রাজ্যের অনুসারী শিল্পও। বিশেষত প্রবল সঙ্কটে পড়তে হয়েছে প্লাস্টিক শিল্পকে। এমনকী কাঁচমালের সঙ্কট কাটাতে চিন-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে তা আমদানির পরিমাণ বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল প্লাস্টিক সংস্থাগুলি। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা কর হারাচ্ছিল রাজ্যও।

এই পরিস্থিতিতে কারখানাটিকে ফের চালু করে সেখানে উৎপাদন জারি রাখতে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে আর্থিক সংস্থাগুলিকে জানিয়েছিল পেট্রোকেম। যার মধ্যে প্রথমেই প্রয়োজন ১,০০০ কোটি টাকা। আর্থিক সংস্থাগুলি চেয়েছিল, এই হাজার কোটির মধ্যে অন্তত ১০% (১০০ কোটি টাকা) ঢালুক চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। গোষ্ঠীও জানিয়েছিল, কারখানা চালাতে ৭৫০ কোটি টাকা আনতে পারবে তারা। পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর তরফে প্রাথমিক ভাবে ১০০ কোটি টাকা ঢালার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রমাণ দাখিল করা হয়। আর এই সবেরই জেরে ফের দরজা খোলার জন্য তৈরি হচ্ছে পেট্রোকেম। আইনি ঝঞ্ঝাট, আর্থিক সঙ্কট, সব কিছু পেরিয়ে আগামী দিনে সংস্থা সত্যিই পুরোদস্তুর ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, আপাতত সে দিকেই চোখ সকলের।

haldia petrochemicals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy