Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘হাতটাই তো নেই, আমি লিখব কী করে’! কান্না থামাতে হিমশিম মা

কোনওমতে কান্না চেপে মেয়ের শয্যা থেকে দূরে সরে গেলেন শিশুকন্যার মা শম্পা সরকার। তার পরে বললেন, ‘‘সারাদিন এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সের চালক তো রাস্তাই চেনেন না। দ্রুত অস্ত্রোপচার করানো গেলে মেয়ের হাতটা হয়তো কাটা যেত না।’’

হাসপাতালে পৃথা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে পৃথা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

কনুই থেকে তার ডান হাতের বাকি অংশ আর নেই। শুক্রবার রাতেই কাটা গিয়েছে। ডান গালে ক্ষত। থুতনিও কেটে গিয়েছে! বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে ভর্তি এমনই এক শিশুকন্যার কান্না থামাতে শনিবার দিনভর হিমশিম খেয়েছেন তার বাড়ির লোকজন। কিছুই হয়নি, সব ঠিক আছে বোঝালেই উত্তরে সে বলছে, ‘‘তোমরা মিথ্যে কথা বলছ। হাতটাই তো নেই, আমি লিখব কী করে?’’

কোনওমতে কান্না চেপে মেয়ের শয্যা থেকে দূরে সরে গেলেন শিশুকন্যার মা শম্পা সরকার। তার পরে বললেন, ‘‘সারাদিন এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সের চালক তো রাস্তাই চেনেন না। দ্রুত অস্ত্রোপচার করানো গেলে মেয়ের হাতটা হয়তো কাটা যেত না।’’

শুক্রবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় স্কুলে যাওয়ার পথে অটো উল্টে গুরুতর জখম হয় পৃথা সরকার নামে ওই স্কুলপড়ুয়া। অটোয় পৃথা ছাড়া আরও কয়েক জন পড়ুয়া ছিল। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, ঘটনার কিছু আগে ‘ড্রাইভারকাকু’র পাশে বসবে বলে চালকের ডান দিকে গিয়ে বসে সে। একটি কুকুর সামনে পড়ে যাওয়ায় চালক দ্রুত ব্রেক কষলে অটোটি উল্টে যায়। ডান কনুই থেকে কেটে গিয়ে ঝুলতে থাকে পৃথার হাত। ওই অবস্থাতেই আহতকে নিয়ে শুরু হয় পরিবারের দৌড়।

আরও পড়ুন: ঘুম ভাঙতেই মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখল শিশু

পৃথার কাকা তপন সরকার জানান, প্রথমে গোবরডাঙার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পৃথাকে। চিকিৎসকেরা অবস্থা দেখে ভর্তি নিতে চাননি। সেখানেই আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও একই উত্তর মেলে। সেখান থেকে হাবড়া হাসপাতাল। তপন বলেন, ‘‘ওখানকার চিকিৎসকেরা বলে দেন, দ্রুত কলকাতায় নিয়ে যান। না হলে মেয়ের হাত রাখা যাবে না।’’ কলকাতায় আসার পথে বারাসতের কাছে অবস্থার অবনতি হওয়ায় পৃথাকে সেখানকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ। তপন বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক কলকাতার ইউ এন ব্রহ্মচারী স্ট্রিটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সের চালক কিছুতেই রাস্তা চিনতে পারছিলেন না।’’ কয়েক ঘণ্টা ঘুরে এর পরে শিশুকে বাইপাসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাতে পৃথার অস্ত্রোপচার হয়। পরে কাটা হাত নিয়ে আইনপ্রক্রিয়ার জন্য ফুলবাগান থানায় যেতে হয় পরিবারকে। তপন বলেন, ‘‘মুক্তোর মতো হাতের লেখা মেয়েটার। এখন ওর জন্যই প্রতিবন্ধীর ফর্ম পূরণ করতে হবে— ভাবতে পারছি না!’’

আরও পড়ুন: সেতু থেকে লাইনে পড়ে জখম দুই

এ দিন বিকেলের পরে ওই শিশুকন্যাকে অনেকটা শান্ত করা গিয়েছে। পৃথা বলছে, ‘‘কাকা বলেছে, বাঁ হাতে লিখতে শিখিয়ে দেবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Injury Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE