Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাগে কন্ডোম, ‘অবাধ্য’ ছাত্রকে বহিষ্কার করে অভিযুক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মণ্ডল ওই পড়ুয়াকে বসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘ওকে স্কুলে আসতে দিলে অন্য পড়ুয়ারা খারাপ হয়ে যেত।’’ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা দফতরের কী নির্দেশিকা রয়েছে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৬
Share: Save:

ব্যাগে ‘কন্ডোম’ থাকার অপরাধে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের স্কুলে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সল্টলেক সেক্টর চারের সুকান্তনগর বিদ্যানিকেতনের ওই পড়ুয়াকে সম্প্রতি ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানালেন অভিভাবক।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মণ্ডল ওই পড়ুয়াকে বসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘ওকে স্কুলে আসতে দিলে অন্য পড়ুয়ারা খারাপ হয়ে যেত।’’ কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষা দফতরের কী নির্দেশিকা রয়েছে? কৃষ্ণপদবাবুর দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে পড়ুয়াকে বহিষ্কার বা বসিয়ে দেওয়ার কোনও নির্দেশিকা নেই। কিন্তু ক্লাস টিচার এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যদি না রাখতে চান আমি একা কী করতে পারি?’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, ‘‘খুবই অবাধ্য ছেলেটি। ওকে বাড়ি থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পাশ করতে পারেনি। ফলে প্রমাণ করতে পারল না যে ও ভাল ছেলে।’’

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, ‘‘যেখানে প্রাথমিক স্তর থেকে স্কুলে যৌন শিক্ষার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে নবম শ্রেণির এক পড়ুয়ার কাছে কন্ডোম মেলায় তাকে বসিয়ে দেওয়া কিংবা স্কুল থেকে বার করে দেওয়া যায় না।’’ তিনি আরও জানান, ওই পড়ুয়ার অভিভাবক চাইলে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে স্কুলের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।’’

সুকান্তনগরের বাসিন্দা ওই পড়ুয়ার মায়ের অভিযোগ, গত বছর গরমের ছুটির আগে ক্লাস চলাকালীন তাঁর ছেলের থেকে কন্ডোম পাওয়া গিয়েছিল। এ কথা তাঁকে স্কুলে ডেকে জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলের তরফে বলা হয়েছিল, ছেলের ওই অন্যায়ের জন্য তাকে স্কুলে রাখা যাবে না। তাকে অন্যত্র ভর্তি করতে প্রয়োজনে টাকা দেবে স্কুল। পড়ুয়ার মায়ের দাবি, ‘‘যদিও ছেলে বলেছিল অন্য সহপাঠী তাকে রাখতে দিয়েছে। কিন্তু সে কথা কেউ শোনেননি। অনেক অনুনয়ের পরে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছিলেন, বাড়িতে পড়াশোনা করে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে আসতে পারবে ছেলে। সেই মতো পরীক্ষা দেয়। কিন্তু পাশ করতে পারেনি।

চলতি জানুয়ারিতে ফের নবম শ্রেণিতেই ভর্তি হয়। মায়ের অভিযোগ, প্রায় দিনই ফিরে আসত ছেলে। কারণ, শিক্ষক ওকে ক্লাসে ঢুকতে দিতেন না। পড়ুয়ার মায়ের আরও অভিযোগ, নিষেধ সত্ত্বেও স্কুলে ঢোকার জন্য এক দিন শিক্ষক ওকে চড়ও মারেন। এর পরেই উত্তেজিত হয়ে যায় ওই ছাত্র। যদিও এ জন্য ওই ছাত্রকে বহিষ্কার না করে কাউন্সেলিং করার দরকার ছিল বলে মনে করছেন একাধিক মনোবিদ। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের বক্তব্য, ‘‘বয়ঃসন্ধিকালে নানা রকম কৌতূহল থাকেই। সে জন্য স্কুলে কাউকে আসতে না দেওয়া অথবা ক্লাসে ঢুকতে না দিয়ে তাকে মারা—পুরোটাই অন্যায়। বরং ওই ছাত্রকে সহানুভূতির সঙ্গে বোঝালে ওর ভাল হত।’’

শিশুদের সুরক্ষার জন্য একাধিক নির্দেশও রয়েছে। বলা হয়েছে, ঘৃণ্যতম অপরাধ না করলে কোনও নাবালক-নাবালিকাকে ‘খারাপ’ কিংবা ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত করা যায় না। প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে কন্ডোম রাখা এবং অবাধ্য আচরণের জন্য কোনও পড়ুয়াকে বসিয়ে দেওয়া এবং ট্রান্সফার করতে পারে স্কুল?

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্কুল পরিদর্শক (ব্যারাকপুর) দীপঙ্কর রায়ও মনে করেন কোনও স্কুল এ কারণে পড়ুয়াকে বসিয়ে দিতে পারে না। হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্তের মতে, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে স্কুলকে আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হয়। দায়িত্ববান হতে হয়। তাকে স্কুলে আসতে না বলা কিংবা বহিষ্কার করা মানে ওই পড়ুয়াকে তো মূলস্রোত থেকে ছিটকে দেওয়া হল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Salt Lake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE