Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খাদ্য-বিপণিতে কাজের তালিম রূপান্তরকামীদের

সাম্প্রতিক অতীতে কয়েকটি ঘটনায় কলকাতার পানশালা বা নামী লাউঞ্জবারে রূপান্তরকামী নারী অতিথি হিসেবে এসে হেনস্থার শিকার হয়েছেন, এমনও ঘটেছে।

 চলছে প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র

চলছে প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

আগেই করে দেখিয়েছিল বেঙ্গালুরু! এ বার কলকাতার পালা।

রূপান্তরকামীদের চাকরি দেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত মুখ খুললেও বাস্তবে চাকরিক্ষেত্রে তাঁদের উপস্থিতি এখনও মুষ্টিমেয়। এ বার আতিথেয়তা শিল্পে চাকরির জন্য তালিম দিতে এ শহরে জনা দশেক রূপান্তরকামী মেয়ে-পুরুষকে বাছাই করা হয়েছে। সম্প্রতি রূপান্তরকামীদের কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত একটি সংগঠনের সঙ্গে একটি সর্বভারতীয় মোমো বিক্রয়কারী রেস্তরাঁগোষ্ঠীর মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। আতিথেয়তা শিল্পে, বিশেষত পাঁচতারা হোটেলগুলি এর আগেই রূপান্তরকামী-সমকামী তথা যৌন সংখ্যালঘু সমাজভুক্তদের পেশাদার হিসেবে গ্রহণ করার বেড়া ভেঙেছিল। তবে এখনও পর্যন্ত সেই চেষ্টাটুকু এগোচ্ছে খানিক মেপে-জুপেই।

কলকাতার বি বা দী বাগের অফিসপাড়ার কাছের একটি পাঁচতারা হোটেল-গোষ্ঠীর এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আতিথেয়তা শিল্পে অতিথিদের মন বুঝে চলতে হয়। আমাদের সমাজে একাংশের মধ্যে সমকামী-রূপান্তরকামীদের প্রতি বিদ্বেষের প্রবণতা ভাল মতোই রয়েছে। তবে নীতিগত ভাবেই লিঙ্গ বা যৌন পছন্দের ভিত্তিতে কর্মচারীদের মধ্যে কোনও রকম ফারাক করা হয় না।’’ তা ছাড়া, অতিথিদের মধ্যেও সমপ্রেমী জুটি দেখা যাচ্ছে অনেক। ফলে, তাতেও রূপান্তরকামী গোষ্ঠীগুলির প্রতি আতিথেয়তা শিল্পের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে।

তবু সাম্প্রতিক অতীতে কয়েকটি ঘটনায় কলকাতার পানশালা বা নামী লাউঞ্জবারে রূপান্তরকামী নারী অতিথি হিসেবে এসে হেনস্থার শিকার হয়েছেন, এমনও ঘটেছে। এ রাজ্যে রূপান্তরকামীদের অধিকারের লড়াইয়ে প্রথম সারির মুখ তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহও কয়েক দিন আগেই কলকাতার ব্যস্ত এলাকায় একটি গয়নার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যবহারে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। রঞ্জিতা বলেন, ‘‘আতিথিয়েতা শিল্পের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেখানে অনেক মানুষের যাতায়াত, সেখানে রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গভুক্তরা চাকরিতে ঢুকলে সমাজের মন বদলাতে সুবিধা হবে। ছক-ভাঙা ভূমিকায় রূপান্তরকামীদের তুলে ধরতে হোটেল-রেস্তরাঁর ভূমিকাও সদর্থক।’’ রূপান্তরকামী বা হিজড়েরা কলকাতায় অনেকেই রাজপথে ভিক্ষা করেন। তাতে কারও কারও ধারণা হয়, তাঁরা অন্য ধরনের কাজ করার যোগ্য নন। আতিথেয়তা শিল্পে রূপান্তরকামীরা কাজ করলে সমাজের নানা স্তরের ভুল ধারণা ভাঙতে সুবিধা হবে বলেই আশা রঞ্জিতার।

ওই সর্বভারতীয় মোমো চেনটির ন্যাশনাল বিজ়নেস হেড নিলয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এর আগে বেঙ্গালুরুতে শিফ্‌ট ম্যানেজার, ম্যানেজার বা ওয়েটার নানা ভূমিকাতেই আমরা রূপান্তরকামীদের নিয়েছি। কলকাতাতেও ওঁরা নিশ্চিত ভাবেই ভাল কাজ করবেন।’’ কয়েক সপ্তাহ শিক্ষানবিশির পরে এ বার ১০ জন কাজের সুয়োগ পাবেন বলে নিলয়বাবুর দাবি। একই সঙ্গে এক রূপান্তরকামী পুরুষকে শিলিগুড়িতে নিয়োগ করতে পারে একটি পাঁচতারা হোটেল-গোষ্ঠী। নিলয়বাবুর

ইচ্ছা, ভবিষ্যতে রূপান্তরকামী কর্মচারীদের দ্বারা পরিচালিত একটি শাখা কলকাতায় খোলার। যাদবপুরে রূপান্তরকামী-সমকামী তথা যৌন সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতিশীল পরিবেশে একটি কাফে খোলা হয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও রূপান্তরকামী-সমকামীদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় সমাজকর্মীরা মনে করেন, কাজের সুযোগ দিতে রূপান্তরকামীদের আলাদা করে রাখার থেকে তথাকথিত মূল স্রোতের সঙ্গে কাজের সুযোগ দিলে ওঁরা সামাজিক বিদ্বেষ ছাপিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Work Mamata Banerjee Transgender
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE