Advertisement
০৭ মে ২০২৪

রেষারেষিতে বাসযাত্রীর মৃত্যু হাওড়া সেতুতে

শনিবার বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ হাওড়া সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর স্তম্ভের মাঝে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত যাত্রীর নাম মনোজ জৈন (৫০)। বাড়ি হাওড়ার ফজিরবাজারের কাছে জেলেপাড়া ফার্স্ট বাইলেনে।

মনোজ জৈন

মনোজ জৈন

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৬
Share: Save:

রেষারেষির সময়ে ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা অন্য একটি বাসকে সজোরে ধাক্কা মারলেন চালক। যার জেরে মৃত্যু হল এক যাত্রীর। জখম হলেন আরও পাঁচ জন। তাঁরাও বাসে ছিলেন।

শনিবার বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ হাওড়া সেতুর ১৫ ও ১৬ নম্বর স্তম্ভের মাঝে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃত যাত্রীর নাম মনোজ জৈন (৫০)। বাড়ি হাওড়ার ফজিরবাজারের কাছে জেলেপাড়া ফার্স্ট বাইলেনে। তিনি হাওড়ামুখী একটি বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ধর্মতলামুখী অন্য একটি বাস মনোজের বাসে ধাক্কা মারতেই তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়েন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ধর্মতলামুখী বাসের জখম যাত্রীরা হলেন তনুশ্রী ঘোষ, চরণ ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী ঝুমা ঘোষ, কৃষ্ণা সেনাপতি এবং নির্মল চক্রবর্তী।

হুগলির উত্তরপাড়ার আব্দুল সাহেব সরণির বাসিন্দা তনুশ্রী হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কৃষ্ণার বাড়ি হাওড়ার বালিটিকুরিতে। চরণ ও ঝুমা হুগলির ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা। তাঁদের হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্মলের বাড়ি হাওড়ার জগৎবল্লভপুরে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকেও ছেড়ে দেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

পুলিশ ও জখম যাত্রীরা জানান, দাশনগর-ধর্মতলা রুটের (৭৩ নম্বর) একটি বেসরকারি বাস ওই রুটেরই আর একটি বাসকে বেপরোয়া ভাবে ওভারটেক করতে যাওয়াতেই বিপত্তি ঘটে। উল্টো দিক থেকে আসা হাওড়ামুখী ৪১ নম্বর রুটের একটি বাসকে সজোরে ধাক্কা মারে ধর্মতলামুখী বাসটি। দুর্ঘটনার অভিঘাতে ৭৩ নম্বর রুটের বাসের সামনের ডান দিকের অংশ দুমড়েমুচড়ে ভিতরে ঢুকে যায়। চালকের দরজা আটকে যায় স্টিয়ারিংয়ে। জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা, পেশায় ঝুটো গয়নার ব্যবসায়ী নির্মল বলেন, ‘‘আমরা মোট তিন জন ব্যবসার কাজে ক্যানিং স্ট্রিটে যাচ্ছিলাম। আমি চালকের কেবিনে ছিলাম। কম বয়সি চালক দাশনগর থেকেই বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। একাধিক যাত্রী তাঁকে গতি কমাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি শুনছিলেন না। এই দুর্ঘটনার জন্য চালকই পুরোপুরি দায়ী।’’

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরেই ৪১ নম্বর রুটের বাসটি হাওড়া স্টেশনের দিকে চলে যায়। কিন্তু ৭৩ নম্বর রুটের বাসটি প্রায় আড়াআড়ি ভাবে সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে থাকায় যান চলাচল থমকে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন উত্তর বন্দর থানার ওসি ও পুলিশকর্মীরা। হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-ও দলবল নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই সেখান থেকে চালক পালিয়ে যান। পুলিশ জানায়, তাঁর খোঁজ চলছে।

মৃত মনোজের পরিজন ও সহকর্মীরা জানান, তিনি বি বা দী বাগ বাস স্ট্যান্ডের উল্টো দিকে একটি অফিসে হিসেবরক্ষকের কাজ করতেন। এ দিন বিকেলে মনোজ অফিস থেকে বেরোন। হিন্দমোটরে স্ত্রী সন্তোষ, কন্যা নিধি এবং পুত্র অনন্তকে নিয়ে থাকতেন তিনি। প্রতি শনিবার হিন্দমোটরে যাওয়ার আগে হাওড়ায় মায়ের কাছে যেতেন মনোজ। তাঁর পরিজনেরা জানান, নিধির বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। তার মধ্যে এই দুর্ঘটনা। মৃতের বন্ধু সঞ্জয় জৈন বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের কাছে জেনেছি, দুর্ঘটনায় পা ভেঙে তলপেটে ঢুকে যাওয়াতেই ও মারা যায়।’’ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, মৃতের ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।

পুলিশ জানায়, হাওড়া সেতুতে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুর্ঘটনার তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করবে লালবাজারের ট্র্যাফিক দফতরের ‘এফএসটিপি’ বিভাগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Bus Rivalry Howrah Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE