Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘বন্ধুর দোকানের জিনিস বাঁচাতে পেরেছি, এত কষ্টের মধ্যে এই কথা ভেবে একটু ভাল লাগছে’

বাগড়ি মার্কেটের এইচ গেট দিয়ে ঢুকে সিঁড়ির সামনে একটা ছোট তক্তপোশে বসে ছিলেন ফরজাউদ্দিন। পাঞ্জাবিটা জবজবে ভেজা। জানালেন, বন্ধুর দোকান থেকে জিনিস বার করতে গিয়ে দমকলের জলে পুরো ভিজে গিয়েছেন।

মাল বাচানোর চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র

মাল বাচানোর চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান এবং শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

সর্বনাশের মধ্যে সখ্যের জয়ধ্বনি। নিজের মহাবিপদেও প্রতিবেশীর প্রতি মমতা। দেখাল বাগড়ির আগুন।

ইদ আর পুজোয় উপহার সামগ্রী ভাল বিকোবে। এই আশায় বাগড়ি মার্কেটের সি ব্লকের দোকানে প্রচুর মনোহারী সামগ্রী মজুত করছিলেন ফরজাউদ্দিন। শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ ফোনে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়েই ছুটে আসেন তিনি। কোনও ভাবে যদি দোকানটা বাঁচানো যায়! এসে দেখেন, সি ব্লক তখন দাউদাউ করে জ্বলছে। মার্কেটের সরু গলি ভরে গিয়েছে ধোঁয়ায়। সেই ধোঁয়ার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করতেই তাঁকে টেনে ধরেন এক বন্ধু। আর দোকানে ঢুকতে পারেননি তিনি।

বাগড়ি মার্কেটের এইচ গেট দিয়ে ঢুকে সিঁড়ির সামনে একটা ছোট তক্তপোশে বসে ছিলেন ফরজাউদ্দিন। পাঞ্জাবিটা জবজবে ভেজা। জানালেন, বন্ধুর দোকান থেকে জিনিস বার করতে গিয়ে দমকলের জলে পুরো ভিজে গিয়েছেন। ‘‘পুজোর আগে সব শেষ হয়ে গেল। তবে কয়েক জন বন্ধুর দোকানের জিনিস বাঁচাতে পেরেছি। এত কষ্টের মধ্যে এই কথা ভেবে একটু ভাল লাগছে,’’ ধরা গলায় বললেন ফরজাউদ্দিন।

সি ব্লকের তেতলায় চিকিৎসা সামগ্রীর দোকান হিতেশ মাহাতোর। তিনি জানান, আগুনের মধ্যে নিজের জিনিস বাঁচাতে পারেননি। তবে বাঁচাতে পেরেছেন তাঁর এক বন্ধুর ওষুধের দোকানের কিছু ওষুধ। তিনি বলেন, ‘‘দোতলায় এসে বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ পাচ্ছিলাম। দমকলের কর্মীরা ভিতরে যেতে বারণ করলেন। কিন্তু শুনিনি ওঁদের কথা। নিজের দোকান বাঁচাতে না-পারি, বন্ধুর দোকান বাঁচাতেই হবে— এই ভেবে ঝুঁকি নিয়ে ধোঁয়ার মধ্যে ঢুকে যাই।’’

আরও পড়ুন: ‘সামনেই আবার পুজো, একার রোজগারে সংসার চলবে কী ভাবে!’

কালো ধোঁয়ার মধ্যে জিনিসপত্র বার করতে করতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ফরজাউদ্দিন, হিতেশরা। বারবার কাশি হচ্ছিল। তার মধ্যেই দোতলার বন্ধুদের দোকান থেকে পেটি পেটি মালপত্র বার করছিলেন তাঁরা। আগুনে পুড়ে গিয়েছে বাগড়ি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আশুতোষ সিংহের দোকানও। রান্নাঘরের সামগ্রী, ঘর সাজানোর জিনিসপত্রের দোকান ছিল তাঁর। আশুতোষবাবু বলেন, ‘‘রাত আড়াইটে নাগাদ মার্কেটে এসে দেখলাম, সি ব্লকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তখনই বুঝে যাই, সব শেষ। তবু এর মধ্যেই এই ভেবে কিছুটা সান্ত্বনা পাচ্ছি যে, কয়েক জন বন্ধুর দোকান বাঁচাতে পেরেছি।’’

তেতলায় ‘ইমিটেশন’ গয়নার গুদাম ছিল শুভ্রজিৎ সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘শুধু নিজের দোকানের নয়, পাশের এক বন্ধুর ইমিটেশনের দোকানের মালপত্রও বার করতে পেরেছি। তবে পুজোর আগে আমাদের যা ক্ষতি হল, তার থেকে কী ভাবে উঠে দাঁড়াব, ভেবে পাচ্ছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE