প্রতীকী ছবি।
স্কুলে পরীক্ষা চলছিল। ইংরেজি পরীক্ষা শেষে স্কুলগাড়ির চালকের ফোন থেকে মাকে জানিয়েছিল, হাতে-পায়ে ব্যথা করছে, মাথা ঘুরছে। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরে বার দশেক বমি করে বছর এগারোর আরুষ দত্ত। মাকে বারবার বলছিল, ‘‘স্কুলের দাদার মতো আমারও জ্বর হয়নি তো!’’ মা আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি!
মঙ্গলবার ভোরে এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় আরুষ। হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির উল্লেখ করা হয়েছে। কলকাতার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অভিষেক ও পম্পা দত্তের ছেলে আরুষ সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। শনিবার তাকে ফুলবাগানের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পম্পাদেবীর অভিযোগ, নার্সিংহোমে ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি। রবিবার তার অবস্থার অবনতি হলে নার্সিংহোম তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিছু বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অভিষেকবাবু এবং তাঁর বন্ধু। কিন্তু ডেঙ্গি আক্রান্তকে ভর্তি করতে অস্বীকার করে কয়েকটি হাসপাতাল। ‘‘সল্টলেক, বাইপাস, দমদমের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গি শুনেই তারা ভর্তি নিতে চায়নি,’’ বলেন পম্পাদেবী।
রাত ১২টা নাগাদ আরুষকে নিয়ে যাওয়া হয় মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক পরীক্ষার পরেই জানিয়ে দেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোর ৫টা নাগাদ মারা যায় ওই কিশোর।
মানিকতলার পিয়ারিমোহন সুর লেনের দত্ত পরিবারের তরফে জানানো হয়, এলাকায় পুরকর্মীরা নজরদারি চালান। সপ্তাহভর এলাকা পরিষ্কার হয়। তবে তাঁদের অভিযোগ, স্কুল-চত্বরে ডেঙ্গি মোকাবিলায় ঘাটতি রয়েছে। মশার দাপট বাড়লেও ফুলপ্যান্ট-শার্ট পরে যাওয়া নিষেধ। তার উপরে আশপাশের এলাকাতেও আবর্জনা রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জেরেই স্কুলের কয়েক জন পড়ুয়া জ্বরে আক্রান্ত।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের তরফে স্কুলশিক্ষা দফতরের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। গত বছর স্কুল-চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানি চলেছিল। তাই বৈঠকে স্থির হয়, স্কুলের চার পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব স্কুল-কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না। মশার দাপট এড়াতে বর্ষাতেও ফুলপ্যান্ট-শার্ট পোশাক করার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু অনেক বেসরকারি স্কুলে বর্ষার পোশাক হিসেবে ফুলপ্যান্ট-শার্টের উপরে নিধেষাজ্ঞা রয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘স্কুল যথেষ্ট সক্রিয়। পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সব সময় ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ চলছে। বর্ষায় ফুলপ্যান্ট-শার্টের ক্ষেত্রেও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।’’
পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য আরুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গি ঘোষণা করেনি। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতের চিকিৎসার নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy