Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে সুর বাঁধবেন বাস্কারেরা 

কোনও পূর্ব প্রস্তুতি বা আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়। হঠাৎই রাস্তার  উপরে বসে বা দাঁড়িয়ে গেয়ে উঠবেন একদল ছেলেমেয়ে। ছোট-ছোট দল করে। হাতে গিটার ও অন্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে। বিদেশে রাস্তায়-গলিতে যা হামেশাই হয়, এ বছর পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসবে হতে চলেছে তেমনটাই।

ছন্দ: বিদেশে এ ভাবেই বাদ্যযন্ত্র হাতে দেখা যায় বাস্কারদের।

ছন্দ: বিদেশে এ ভাবেই বাদ্যযন্ত্র হাতে দেখা যায় বাস্কারদের।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

কোনও পূর্ব প্রস্তুতি বা আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়। হঠাৎই রাস্তার উপরে বসে বা দাঁড়িয়ে গেয়ে উঠবেন একদল ছেলেমেয়ে। ছোট-ছোট দল করে। হাতে গিটার ও অন্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে। বিদেশে রাস্তায়-গলিতে যা হামেশাই হয়, এ বছর পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসবে হতে চলেছে তেমনটাই।

এই প্রথম বড়দিন উৎসবে ‘বাস্কারদের’ সঙ্গে ছন্দে তাল মেলাতে পারবেন শহরবাসী। গান গাইতে পারবেন। পার্ক স্ট্রিটে রাজ্য পর্যটন দফতর ও কলকাতা পুরসভার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলা বড়দিনের উৎসবে চলতি বছরে সবচেয়ে বড় চমক হতে চলেছেন এই বাস্কারেরাই বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বহু দিন থেকেই পার্ক স্ট্রিটের বড়দিন উৎসব একদম বিদেশের ধাঁচে করার জন্য বাস্কারদের আনার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত এ বছরে বাস্কারদের আনার ব্যবস্থা এক রকম নিশ্চিত করে ফেলেছেন উদ্যোক্তারা। তবে কত জন আসবেন এবং তাঁরা কখন ‘পারফর্ম’ করবেন, সে ব্যাপারে এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘বাস্কিং মোটামুটি নিশ্চিত। কত জন আসবেন এবং কী ভাবে অনুষ্ঠানটা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’’

বাস্কার কারা?

রাস্তার মোড়ে একক ভাবে বা ছোট দল করে কয়েক জন গান-বাজনা করেন নিজেদের মতো। সে ভাবেই তাঁরা পথচলতি মানুষদের মনোরঞ্জন করে থাকেন। সহজ কথায়, বাস্কারেরা হলেন ‘স্ট্রিট পারফর্মার’। রাস্তার ধারে বা মোড়ে দল বেঁধে গান করেন তাঁরা। বাস্কিং নতুন কিছু নয়, এর ইতিহাস অনেক পুরনো। এক-এক দেশে এক-এক নামে পরিচিত বাস্কারেরা। ফ্রান্সে যেমন বাস্কারদের ডাকা হয় ‘ত্রুবাদর’ (troubadour) নামে, রাশিয়ায় আবার তাঁদেরই বলা হয় ‘স্কোমোরচ’ (skomoroch)। এমনিতে এই শব্দটির উৎস হল ফরাসি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আনন্দ লাল বলেন, ‘‘সতেরো শতকে যখন অন্য অনেক শব্দ ফরাসি ভাষা থেকে ইংরেজিতে চলে আসছে, তখনই এই শব্দটা চলে এসেছে। তবে মূল ফরাসি শব্দের মানেটা হল ভ্রাম্যমাণ জাহাজ। সেটা ইংরেজিতে এসে অর্থ পরিবর্তন করে ভ্রাম্যমাণ

গায়ককে বোঝাচ্ছে।’’

কিন্তু এই বাস্কারদের আটকানোর জন্য আবার নানা আইন রয়েছে। রোমে বাস্কারেরা যাতে রাস্তায় গান না গাইতে পারেন, সে জন্য ৪৬২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রথম আইন আসে। তার পরে যত দিন এগিয়েছে, তত রাস্তায় গান-বাজনার আইনেও বদল এসেছে। লন্ডনে টিউব স্টেশনে গান গাওয়ার জন্য বাস্কারদের আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হয়।

তবে শুধু বাস্কারদের সংযোজনই নয়, এ বছর আরও দু’টি নতুন জিনিস সংযোজন হতে চলেছে। সান্তা ক্লজ ও মেরি অ্যান্ড জোসেফ প্রতিযোগিতা। কারা তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং প্রতিযোগিতার নিয়ম কী, তা চূড়ান্ত হবে কিছু দিনেই। আগামী সপ্তাহেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসব হয়। তার জন্য বিশেষ আলোও লাগানো হয় সেখানে। উৎসবের কথাকে মাথায় রেখে পার্ক স্ট্রিটে বেশ কয়েকটি স্থায়ী গেট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের আকৃতির

গেট রয়েছে ১৩টি ও ‘এল’ আকৃতির গেট রয়েছে তিনটি। তার পাশাপাশি প্রতি বছরের মতোই নতুন করে আলো লাগানো হবে সেখানে। ১৮ তারিখ থেকে আলোগুলি জ্বালানো শুরু হবে। সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা থাকবে, সেই সঙ্গে নতুন করে সাজানো হবে ওই রাস্তা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগামী ২১ তারিখ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Busker Park Street Christmas Celebration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE