কলকাতার এজেসি বোস রোড-বেলভেডিয়ার রোডের মোড়ে এই সেই দুর্ঘটনাস্থল। সোমবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে যতই প্রচার হোক, এক শ্রেণির চালকের সে সব থোড়াই কেয়ার! সোমবার দিনে-দুপুরে কলকাতার রাজপথে বেঘোরে তিন-তিন জনের মৃত্যু ফের তা প্রমাণ করল।
অথচ ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ স্লোগান খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত। স্লোগানের পোস্টার, ব্যানার ছড়িয়েছে রাজ্য জুড়ে। আর কলকাতায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পোস্টার সেঁটেছে লালবাজার, তৈরি হয়েছে ‘থিম সং।’ কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে একাধিক প্রচার-অনুষ্ঠানও হয়েছে।
কিন্তু গাড়িচালকদের একাংশ যে এ সব দেখতে বা শুনতে পান না, এ দিন বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ এজেসি বোস রোড-বেলভেডিয়ার রোডের মোড়ের দুর্ঘটনা তা আর এক বার দেখিয়ে দিল। যেখানে সিগন্যাল না-মেনে ধেয়ে আসা একটি সেডান পিষে মারল এক কিশোরী-সহ তিন জনকে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম: সুশান্ত মণ্ডল (৫২), রাজীব রায় (৩৫) ও হালিমা খাতুন (১২)। সুশান্তের বাড়ি সরশুনা, রাজীবের বাড়ি মহেশতলা ও হালিমার মথুরাপুরে। জখম ১৮ জনের তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাড়িচালক সরোজ বারিকও আহত হয়ে হাসপাতালে। সিগন্যাল হলুদ হওয়া সত্ত্বেও গাড়িটি অস্বাভাবিক জোরে ছুটে রাস্তা ও ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা মোটরসাইকেল ও পথচারীদের পিষে দেয়।
লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, চালকদের একাংশের বিশেষত কমবয়সীদের মধ্যে বেপরোয়া গাড়ি চালানো অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। শুধু জরিমানা করে বা এক রাত লকআপে রেখে তা পাল্টানো যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘কঠোর শাস্তি দরকার।’’
কিন্তু ঘটনা হল, দুর্ঘটনা না-ঘটলেও বেপরোয়া গাড়ি চালাতে দেখলেই চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হবে— এমন আইনি ব্যবস্থা আপাতত প্রস্তাব আকারে। এ দিনের দুর্ঘটনার পরে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের একাধিক কর্তার মত, আরও কঠোর কিছু ভাবতে হবে।
‘সেফ ড্রাইভ সেফ লাইফ’-এ যে ততটা সুফল মিলছে না, সেটা প্রকারান্তরে মেনে নিয়ে লালবাজারের কর্তাদেরও কেউ কেউ বলছেন, ‘‘শহরের কোন রাস্তায় গাড়ির সর্বোচ্চ গতি কত, তা সর্বত্র সাইনবোর্ডে লিখে জানানো হবে। তার চেয়ে জোরে গাড়ি চালালেই ধরপাক়ড় হবে।’’ বস্তুত কিছু রাস্তায় এমন সাইনবোর্ড থাকলেও বহু চালক তা মানেন না। আবার মাঝে-মধ্যে কিছু রাস্তায় ‘স্পিড রিডার গান’ (দূর থেকে গাড়ির গতি মাপার যন্ত্র) নিয়ে টহল দেয় পুলিশের গাড়ি। তবে সে ক্ষেত্রেও বেয়াদব গাড়ির নম্বর নিয়ে বা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের পোড় খাওয়া কয়েক জন অফিসার বলছেন, ‘‘উৎসবের মরসুম শেষ হওয়ার পরে বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। সেই সুযোগে বহু চালকের মন থেকে ভয় উবে গিয়েছে।’’
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলাকালীন বেপরোয়া গাড়ির বায়ুসেনা অফিসারকে পিষে দেওয়া, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথে ঘুমন্ত মানুষকে পিষে দেওয়া, হাজরা রোডে রাতে মোটরসাইকেলকে পিষে দেওয়া— সবই এ বছরের ঘটনা। ‘‘এত কিছুর পরেও বেপরোয়া ড্রাইভারদের বাগে আনা যায়নি। তিন জন মানুষ জীবন দিয়ে সেটা প্রমাণ করলেন।’’— আক্ষেপ এক পুলিশ অফিসারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy