যাঁদের জায়গা তাঁরা জানেন না। যাঁরা সেখানে রয়েছেন তাঁরা নিজেদের জায়গা নয় বলে মাথা ঘামাচ্ছেন না। এর ফলে ভিআইপি রো়ডে কেষ্টপুর খালের ধারে ‘ভাগের মা’র মতো তিলে তিলে মারা যাচ্ছে একের পর এক পূর্ণবয়স্ক গাছ। প্রাকৃতিক নিয়মেই সেই সব গাছের মৃত্যু হচ্ছে, নাকি সেগুলিকে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে মেরে ফেলা হচ্ছে তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
শুক্রবার কেষ্টপুর খালের ধারে গিয়ে মাত্র কয়েকশো মিটারের মধ্যেই ১৬টি মৃত গাছকে চিহ্নিত করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর দাবি, গাছগুলিকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কোনও মহলেই খবর নেই। দমদম পার্কে কেষ্টপুর খালের ধারেই বন দফতরের যে অফিস রয়েছে, সেখানে গিয়ে এ নিয়ে অভিযোগ জানাতেও যান সুভাষবাবু। তাঁর দাবি, সেখানে উপস্থিত বন দফতরের কর্মীরা তাঁকে সাফ জানান, সেখানে তাঁদের অফিস আছে ঠিকই, কিন্তু জায়গাটি পূর্ত দফতর আর সেচ দফতরের মধ্যে ভাগাভাগি করে রয়েছে। ফলে তাঁরা গাছের মৃত্যু সম্বন্ধে কিছু বলতে পারবেন না।
কেষ্টপুর থেকে দমদম পার্ক, বাঙুর বা লেকটাউন হয়ে উল্টোডাঙার দিকে এগোনোর সময় খেয়াল করলেই চোখে পড়বে পাতাহীন শুষ্ক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বড় গাছ। ভিআইপি রোড ও সংলগ্ন খানিকটা জায়গা পূর্ত দফতরের। আর কেষ্টপুর খালের পাড়টি সেচ দফতরের। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘‘ আমায় কেউ কিছু জানায়নি। সত্যিই যদি গাছ মেরে ফেলা হয়ে থাকে তবে দুর্ভাগ্যজনক। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
সুভাষবাবু বলেন, ‘‘পরিবেশ আইনে জীবিত গাছ কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু মৃত গাছ কেটে ফেলা যায়। তাই আগে গাছ মেরে ফেলে পরে তা কাটার ঝোঁক তৈরি হয়েছে দুষ্কৃতীদের মধ্যে।’’
সুভাষবাবু জানান, গাছের গোড়া ফুটো করে তার মধ্যে ইনজেকশন মারফৎ তুঁত, আফিম বা অ্যাসিড দিয়ে দিলে গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যায়। এক্ষেত্রেও তেমনই করা হয়েছে বলেই সুভাষবাবুর দাবি। কেষ্টপুর খালের ধারে ওই সব গাছ কেটে ফেলে সেখানে ব্যবসায়িক কাজকর্মের জায়গা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলেই দাবি সুভাষবাবুর।
সুভাষবাবু বলেন, ‘‘এক সময় কেষ্টপুর খালের ধারে এত গাছ ছিল যে রাস্তা থেকে কেষ্টপুর খাল দেখা যেত না। এখন সেই সবুজায়ন হালকা হয়ে গিয়েছে।’’ সুভাষবাবুর দাবি যে অমূলক নয় তার নজির মিলল লেকটাউন ফুটব্রিজের কাছে। সেখানে জঙ্গল সাফাই করে ইতিমধ্যেই একটি গাড়ি পার্কিং এর জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
অতীতেও ভিআইপি রোডের ধারে রহস্যজনক ভাবে গাছের মৃত্যু হয়েছে। কখনও গাছে পেরেক পোঁতা হয়েছে। কখনও রাতের অন্ধকারে ইচ্ছেমতো ডালপালা কাটা হয়েছে। এমন অভিযোগও উঠেছিল, গাছে আড়াল হওয়ায় হোর্ডিং ব্যবসায়ীদের একাংশ গোপনে গাছ কাটাচ্ছেন। এক বার এক যুবককে গাছের গোড়ায় তুঁত মেশানোর সময়ে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy