প্রতীকী ছবি
শহর জুড়ে লকডাউন। রাস্তায় লোক প্রায় নেই। আর তারই মধ্যে, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় শ্যামপুকুর থানায় ডিউটি অফিসারের সামনে হঠাৎ হাজির এক বৃদ্ধ। পুলিশ জানায়, নিজেকে বংশীধর মল্লিক পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, ছেলেকে খুন করে এসেছেন! আত্মসমর্পণ করতে চান। অফিসার হতভম্ব। পরে সব শুনে বংশীধরবাবুর বাড়িতে গিয়ে উদ্ধার করা হয় তাঁর ছেলে শীর্ষেন্দুর (৪৫) দেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, ১ই, শোভাবাজার লেনের বাসিন্দা, ৭৮ বছরের ওই বৃদ্ধ জানান, প্রতি দিন বিকেলে ছেলে শীর্ষেন্দুকে নিয়ে বেড়াতে বেরোন। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং মৃগী রোগী। এ দিনও তিনি বেরোনোর সময়ে ছেলেকে মাস্ক পরতে বলেন। কিন্তু ছেলে কিছুতেই তা পরতে রাজি হননি। বার বার বলেও রাজি না হওয়ায় তিনি ছেলের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে খুন করেছেন বলে দাবি করেন বৃদ্ধ। বংশীধরবাবুর কাছ থেকে ওই বর্ণনা শুনেই আর দেরি করেননি শ্যামপুকুর থানার অফিসারেরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ঘরের মাটিতে পড়ে রয়েছে শীর্ষেন্দুর দেহ আর বিছানায় শুয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধা। তিনি শীর্ষেন্দুর মা। সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বছর ১৮ ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী তিনি। মায়ের সামনেই ছেলেকে বংশীধরবাবু খুন করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর পরই পুলিশ শীর্ষেন্দুর দেহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় ময়না তদন্তের জন্য। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা।
কিন্তু বংশীধরবাবু এ ভাবে হঠাৎ খুন করবেন কেন? পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় প্রাথমিক ভাবে বংশীধরবাবু জানিয়েছেন, গত ১৮ বছর ধরে অসুস্থ স্ত্রী এবং অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে থাকতে থাকতে তিনি তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর সেই তিক্ততা থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে তদন্তকারীরা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বংশীধরবাবুর কোনও মানসিক অবসাদের ইতিহাস এখনও পাওয়া যায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে, অসুস্থ স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘদিন থাকার অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্ভবত জুড়ে গিয়েছে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা। ছেলে মাস্ক না পরে বাইরে বেরোলে যদি সংক্রমণ হয়,সেই চিন্তাও তাঁকে গ্রাস করেছিল বলে পুলিশের অনুমান।
আরও পড়ুন: এখন যেমন কলকাতা, দেখ তো চিনতে পারো কি না...
আরও পড়ুন: মানতে হবে লকডাউন, বন্ধ হল রাস্তা
ঘটনার কথা শুনে মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থদের সঙ্গে থাকতে থাকতে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েন বয়স্কেরা। ভাবেন, তাঁর অবর্তমানে অসুস্থ ছেলেকে কে দেখবে। আর সম্প্রতি লকডাউনের জেরে বাড়িতে থাকতে থাকতেও হয়তো বিষাদগ্রস্ত হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। সব মিলিয়ে হয়তো এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy