সীমান্তের ও পার থেকে চোরাপথে বিষ ঢুকছে এ দেশে। তার পরে হাতবদল হয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন মাদকের আসর বা ‘রেভ’ পার্টিতে। খাস কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকাগুলি থেকে সাপের বিষ-সহ ‘ক্যারিয়ারদের’ গ্রেফতার করার পরে এমনটাই মনে করছেন পুলিশ ও বন দফতরের কর্তারা।
তদন্তকারীরা বলছেন, কয়েক মাস আগে নৈহাটি ও কৃষ্ণনগর থেকে সাপের বিষ উদ্ধারের পরেই রেভ পার্টির সূত্র মেলে। গত জানুয়ারিতে শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে সদানন্দ মজুমদার নামে এক যুবককে সাপের বিষ সমেত ধরার পরে এ বিষয়ে এক রকম নিশ্চিত হন পুলিশের কর্তারা।
সাপের বিষ এবং রেভ পার্টির প্রসঙ্গে এত কিছু বললেও এখনও পর্যন্ত সাপের বিষের ‘ক্যারিয়ার’ বা খুচরো অপরাধীদেরই শুধু গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রের চাঁই বা রেভ পার্টির সদস্যেরা এখনও তদন্তকারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
খাস কলকাতা ও লাগোয়া এলাকাগুলিতে মাদকের ব্যবসার কথা অজানা নয়। কিন্তু যে ভাবে গত কয়েক মাসে পরপর সাপের বিষ উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সাপের বিষের ব্যবসাও কি মহানগরের আনাচে-কানাচে জাঁকিয়ে বসছে? এ নিয়ে কোনও সদুত্তর দিচ্ছেন না পুলিশ ও বনকর্তারা।
গরল-গাথা
• গোখরো জাতীয় সাপের বিষ। দেখতে চিনির দানার মতো। কারণ, তরল ওই বিষ হাওয়ার সংস্পর্শে এলেই জমাট বেঁধে যায়। মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহৃত হয় ওষুধ তৈরিতেও। কলকাতায় সাপের বিষের খদ্দের হিসেবে সন্দেহে রেভ পার্টির বড় সদস্যেরা। এক-এক দানাতেই তূরীয় নেশা জমে। এক-একটি বয়ামে এক পাউন্ড বিষ ধরে। দাম কয়েক কোটি টাকা।
বন দফতরের খবর, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে এ দেশের সীমান্ত লাগোয়া জেলাগুলিতে চলে আসছে সাপের বিষ। তার পরে এ দেশে থাকা বিষ পাচার চক্রের এজেন্টরা ক্যারিয়ারদের মাধ্যমে তা পৌঁছে দিচ্ছে রেভ পার্টির আয়োজকদের হাতে। সদানন্দকে গ্রেফতার করার পরে জেরা করেছিল লালবাজারও। পুলিশ সূত্রের দাবি, কলকাতার কিছু পুরনো দুষ্কৃতীই এখন রেভ পার্টির মূল আয়োজক। এবং সেই সব পার্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা তাঁদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিত্য যাতায়াত। ‘‘ওই প্রভাবশালীদের চট করে ধরার অনুমতি মিলবে না। ফলে, এ নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া করা অনর্থক,’’ উপলব্ধি এক পুলিশকর্তার। ঘটনাচক্রে, এ সব ব্যাপারে তদন্ত করার পরেই সদানন্দের মামলা বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছে লালবাজার।
আরও পড়ুন: এই শহর প্রেমিকের, এই শহর গুপ্তচরের
বাংলাদেশ থেকে কী ভাবে বিষ আসছে, তার কোনও নির্দিষ্ট জবাব এখনও তদন্তকারীদের কাছে নেই। তবে বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাজেয়াপ্ত করা বিষের বয়ামগুলি ফ্রান্সের একটি নির্দিষ্ট সংস্থার তৈরি। সেগুলি ‘বুলেটপ্রুফ’ বলেও লেখা রয়েছে। এমনকী, জলপাইগুড়িতে আটক করা সাপের বিষও ওই সংস্থার বয়ামে ছিল। ফলে সাপের বিষের উৎস যে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে, সে ব্যাপারেও কিন্তু অনেকটাই নিশ্চিত তদন্তকারীরা। কোথা থেকে এই বিষ আসছে, তা নিয়েও একটি তত্ত্ব রয়েছে বন্যপ্রাণ অপরাধ সংক্রান্ত তদন্তকারীদের মধ্যে। সেই অনুযায়ী, সোমালিয়া উপকূলের কাছে একটি জাহাজ লুঠ করেছিল সোমালি দস্যুরা। লুঠ করা জিনিসপত্রের মধ্যে প্রায় ১৬০ পাউন্ড সাপের বিষ ছিল। সেই বিষ কিনে নেয় আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের এক চাঁই। তার কাছ থেকেই চোরাপথে বাংলাদেশ হয়ে এ রাজ্যে ঢুকছে বয়ামভর্তি সাপের বিষ। ‘‘কিন্তু এই তথ্য এখনও পুরোপুরি খতিয়ে দেখা হয়নি। তাই এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করা উচিত নয়,’’ বলছেন এক বনকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy