বেলেঘাটার খোদাগঞ্জ রোডের বাসিন্দা, বছর চুয়ান্নর অজয়কুমার মণ্ডল পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারি বিমা সংস্থা ন্যাশনাল ইনশিওরেন্স-এ প্রিমিয়াম দিয়েছেন। কিন্তু ডায়াবেটিসের রোগী অজয়বাবুর রক্তে শর্করার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় তিনি যখন ডায়াবেটিক সার্জারি করালেন, তখন টাকা দিতে বেঁকে বসল বিমা সংস্থা। দেড় বছর ধরে জুতোর সুখতলা খুইয়ে, লড়াই চালিয়ে চলতি বছর ২৯ মার্চ ওমবাডস্ম্যান-এ মামলায় জিতে যান অজয়বাবু। বিমা সংস্থাকে ওই অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৫২ টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলা পর্যন্ত যেতে হয়নি কলকাতার রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের বাসিন্দা রাজেন্দ্রকুমার তাঁতিয়াকে। কিন্তু মাসের পর মাস হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হয়েছে বেসরকারি বিমা সংস্থার দফতরে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তাঁরও অস্ত্রোপচার হয় ২০১৬ সালের ৭ জুন। এক সপ্তাহ বাদে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বিল হয়েছিল ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮৬০ টাকা। সেই টাকাও দিতে চায়নি বিমা সংস্থা। শেষ পর্যন্ত অনেক যুদ্ধ করে, চিঠি চালাচালি করে সেই টাকা তিনি আদায় করতে পেরেছেন এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে।
স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রে এই রকম অভিযোগের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কেস জমা হচ্ছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অথবা ওমবাডস্ম্যান-এ। অজয়বাবু বা রাজেন্দ্রবাবুর মতো অনেকেরই প্রশ্ন, কষ্ট করে প্রিমিয়ামের টাকা দেওয়ার পরেও যদি প্রয়োজনের সময়ে বিমা সংস্থা টাকা দিতে অস্বীকার করে তা হলে স্বাস্থ্য বিমার অর্থ কী? তা ছাড়া, সেই টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় মাসের পর মাসহত্যে দেওয়ার মতো সময়, মানসিক ও শারীরিক শক্তিই বা কতজনের থাকে?
দু’জনেরই অস্ত্রোপচার করেছেন যে চিকিৎসক, সেই তাপস চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘বেরিয়াট্রিক সার্জারি, ডায়াবেটিক সার্জারির মতোকিছু অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে টাকা দিতে ভীষণ সমস্যা করছে বিমা সংস্থাগুলি। ওরা এগুলিকে কসমেটিক সার্জারি বলে দেখাতে চায়।
অথচ ওজন বাড়া বা শরীরে শর্করার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার ফলে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সেই অর্থে এগুলি জীবনদায়ী অস্ত্রোপচার। এই যুক্তি সংস্থাগুলি মানতে চায় না।’’
আরও পড়ুন: জট কাটল দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর
বিমাগ্রাহকদের আধিকার আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন জড়িত চন্দন ঘোষালের কথায়, ‘‘বিভিন্ন জরুরি অস্ত্রোপচারকে অদ্ভুত কিছু কারণ দেখিয়ে বিমা সংস্থাগুলি বাদ রাখছে। পাশাপাশি তারা এখন বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের প্যাকেজ তৈরি করেছে। কোনও হাসপাতালে কোনও নির্দিষ্ট অস্ত্রোপচারের খরচ সেই প্যাকেজের থেকে বেশি হলে সেই টাকা আর বিমা সংস্থা দিচ্ছে না। তা মেটাতে হচ্ছে গ্রাহককে।’’
ন্যাশন্যাল ইনশিওরেন্সের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা টাকা দিতেই চাই। কিন্তু লোকে প্রচুর গোলমাল করে, ভাল করে নিয়মকানুন পড়ে না। অনেকে আবার অসৎ পথ নেন। হয়তো একটা টিউমার হওয়ার পরে বিমা করলেন। আবার ফিগার-মুখ সুন্দর করতে
অপারেশন করালেন। সেটা আমরা মানব কেন?’’ ইউনাইটেড ইনশিওরেন্সের এক কর্তা আবার যুক্তি দেন, ‘‘একই রোগে বিভিন্ন হাসপাতাল এক এক রকম প্যাকেজ রাখছে। তাই আমাদেরও বিভিন্ন রোগের প্যাকেজ রাখতে হয়েছে। তা না হলে প্রিমিয়ামের দ্বিগুণ টাকা ক্লেম দিতে বেরিয়ে যাচ্ছে।’’
জট কাটল দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy