Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফ্ল্যাটে মায়ের দগ্ধ দেহ, পাশের ঘরে বসে ছেলে

পুলিশের ধারণা, বিদেশে পড়াশোনা করে আসা উচ্চশিক্ষিত ওই ব্যক্তি তাদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।

উদ্ধার করে আনা হচ্ছে মহিলার দেহ। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার করে আনা হচ্ছে মহিলার দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

ফ্ল্যাটের দরজা ভেজানো, ভিতর থেকে বেরোচ্ছে পোড়া এবং পচা গন্ধ। শুক্রবার বিকেলে চেতলা থানা এলাকার শঙ্কর বসু রোডে একটি আবাসনের একতলার ঘর থেকে সেই গন্ধ পেয়ে সন্দেহ হয়েছিল অন্য আবাসিকদের। রবীন্দ্রনাথ পাণ্ডে নামে সেখানকার এক বাসিন্দা জানান, ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, অর্ধদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে গৃহকর্ত্রী, অশীতিপর রেবা গুপ্তের (৮২) দেহ। পাশের ঘরে নির্বিকার মুখে বসে রয়েছেন তাঁর বছর বাহান্নর ছেলে সঞ্জীবশঙ্কর। বাসিন্দারা তাঁকে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করায় তিনি অসংলগ্ন উত্তর দিচ্ছিলেন। কখনও বলছিলেন, সাপের কামড়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তার পরে মায়ের দেহ তিনি অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কখনও আবার দাবি করেছেন, মায়ের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। এ-ও দাবি করেন, সেপ্টিসেমিয়া হয়ে মারা গিয়েছেন তাঁর মা। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জীবকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশের ধারণা, বিদেশে পড়াশোনা করে আসা উচ্চশিক্ষিত ওই ব্যক্তি তাদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাদের আরও অনুমান, মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করতে দেহটি পুড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন সঞ্জীব। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব চলেছে। তবে ঠিক কী ভাবে রেবাদেবীর মৃত্যু হল, তা এখনও জানা যায়নি। দেহটির ময়না–তদন্ত হলে তবেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে পুলিশের ধারণা।

পুলিশ জানিয়েছে, ভবানীপুরের একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন রেবাদেবী। ছেলে সঞ্জীব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি শেষ করে চাকরি করতেন। পরে দেশে ফিরে মোহালির একটি প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে যান। বিয়েও করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে পুলিশ আরও জেনেছে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে কিছু দিন মোহালিতে ছিলেন সঞ্জীব। কিন্তু কোনও কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়। সঞ্জীবের স্ত্রী বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। তার পরে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদও হয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, এ সবের কারণে অবসাদে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাড়ির সামনে কৌতূহলীদের ভিড়। শুক্রবার রাতে, চেতলায়। নিজস্ব চিত্র

অসিতবরণ দত্ত নামে আবাসনের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, এর আগেও একাধিক বার আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, নানা জিনিসপত্র ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল সঞ্জীবের বিরুদ্ধে। মায়ের সঙ্গেও তাঁর মাঝেমধ্যে অশান্তি হত। বিষয়টি দু’-দু’বার পুলিশকেও জানিয়েছিলেন তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, পাড়ার কারও সঙ্গে বিশেষ মেলামেশা ছিল না সঞ্জীবের। সেই কারণে বৃদ্ধার মৃত্যু নিয়ে পড়শিরাও অন্ধকারে ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Chetla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE