ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত প্রবীণদের জন্যও খুলে গেল জাতীয় গ্রন্থাগারের দরজা।
২৩ নভেম্বর থেকে কোভিড-বিধি মেনে জাতীয় গ্রন্থাগার খুলে গেলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী ষাটোর্ধ্ব বয়সিদের জন্য বন্ধই ছিল এই ঐতিহ্যশালী ভবন। তাঁদের যেন জাতীয় গ্রন্থাগারে ঢুকে কাজ করতে দেওয়া হয়, সেই দাবিতে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকে চিঠিও লিখেছিলেন কয়েক জন প্রবীণ নাগরিক। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় গ্রন্থাগারের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) কে কে কচুকোশি বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রবীণেরা এখন পড়াশোনার জন্য জাতীয় গ্রন্থাগারের রিডিং রুম ব্যবহার করতে পারবেন। জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রচুর বয়স্ক মানুষ গবেষণার কাজ থেকে শুরু করে নানা ধরনের পড়াশোনা করতে নিয়মিত আসেন। তাঁদের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।”
তবে কচুকোশি জানিয়েছেন, রিডিং রুম ব্যবহারের জন্য প্রবীণ ব্যক্তি-সহ সবাইকেই বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। রিডিং রুম ব্যবহার করতে গেলে আগে থেকে অনলাইনে তা বুক করতে হবে। যে দিন কেউ পড়তে চাইবেন, তার এক দিন আগে দুপুর ১২টার মধ্যে রিডিং রুম বুক করতে হবে। রিডিং রুমে এক বারে ৪০ জনের বেশি পাঠক থাকতে পারবেন না। করোনা পরিস্থিতিতে একটি বই রিডিং রুমে কোনও পাঠকের ব্যবহারের পরে ৭২ ঘণ্টা কাউকে দেওয়া হবে না। সোম থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে জাতীয় গ্রন্থাগার।
জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রচুর বয়স্ক মানুষ আসেন পড়াশোনা করতে। তেমনই এক জন, গবেষক জয়ন্তী মুখোপাধ্যায়। পুদুচেরির অরবিন্দ সোসাইটির অধীনে ঋষি অরবিন্দের উপরে গবেষণার কাজ করছেন। তিনি বলেন, “আমি জাতীয় গ্রন্থাগারের রিপ্রোগ্রাফি বিভাগে এবং ওল্ড নিউজ়পেপার বিভাগে কাজ করছিলাম। কোভিড পরিস্থিতিতে আট মাস ধরে বন্ধ থাকার পরে লাইব্রেরি খুললেও আমাদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। শেষ পর্যন্ত লাইব্রেরি ব্যবহার করার অনুমতি পাওয়ায় আমরা খুশি।” তবে জয়ন্তীদেবী জানান, তিনি যে দিন জাতীয় গ্রন্থাগারে যেতে চান, সে দিনের জন্য অনলাইনে ওল্ড নিউজ়পেপার বিভাগে সিট বুক করতে গিয়ে দেখেন সেখানে জায়গা ইতিমধ্যেই বুকিং হয়ে গিয়েছে। জয়ন্তীদেবী বলেন, “ওল্ড নিউজ়পেপার বিভাগে শুধু মাত্র চার জনের কাজ করার অনুমতি রয়েছে। ওই বিভাগ অনেক বড়। ওখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরও কয়েক জনকে একসঙ্গে কাজ করার অনুমতি দিলে আমরা সহজে বুকিং করতে পারব।’’
আর এক বয়স্ক গবেষক অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি মাইকেল মধুসূদনের একটি লেখার উপরে কাজ করছি। কাজটা অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে আটকে গিয়েছিল। ফের জাতীয় গ্রন্থাগার খুললেও আমাদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না। এ বার আমরা যেতে পারব জেনে ভাল লাগছে। এ বার আমার কাজটা দ্রুত শেষ করতে পারব।”
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ষাটোর্ধ্ব মানুষদের কতটা সতর্ক হয়ে গ্রন্থাগারে কাজ করতে দেওয়া উচিত? চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, “খুবই সতর্কতা অবলম্বন করে প্রবীণদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন, তাঁরা যখন রিডিং রুমে থাকবেন, তখন অন্য বয়সের মানুষদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। সেইসঙ্গে নিয়মিত স্যানিটাইজ়েশনের কাজ তো করতেই হবে।”
তবে প্রবীণদের গ্রন্থাগারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও এখনও ১৪ বছরের কম বয়সিদের গ্রন্থাগারে প্রবেশের অনুমতি নেই। কচুকোশি বলেন, “জাতীয় গ্রন্থাগারে ছোটদের বিভাগটি খুব একটা খোলামেলা নয়। তাই এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ছোটদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি এখনই আমরা দিচ্ছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy