Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta News

কলকাতার বহু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দু’দিনে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব!

বালিগঞ্জ গার্ডেন রোডের বাসিন্দা অনিন্বিতা মুখার্জির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কানাড়া ব্যাঙ্কের গোলপার্ক শাখায়। রবিবার তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। দেখা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার টাকা কোনও এটিএম থেকে তোলা হয়েছে।

প্রতারণার শিকার কানাড়া ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রতারণার শিকার কানাড়া ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৮ ১৭:২২
Share: Save:

দক্ষিণ কলকাতার একটি বড় অংশে গণ হারে ব্যাঙ্ক প্রতারণা! গ্রাহকদের অগোচরেই এটিএম থেকে তাঁদের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রতারিত হয়েছেন গড়িয়াহাট, লেক গার্ডেন্স এলাকার কানাড়া ব্যাঙ্কের বেশ কয়েক জন গ্রাহক। কী ভাবে প্রতারণা, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

বালিগঞ্জ গার্ডেন রোডের বাসিন্দা অনিন্বিতা মুখার্জির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কানাড়া ব্যাঙ্কের গোলপার্ক শাখায়। রবিবার তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। দেখা যায়, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ হাজার টাকা কোনও এটিএম থেকে তোলা হয়েছে।

রীতিমত অবাক হয়ে যান তিনি। তিনি বলেন, “আমি সঙ্গে সঙ্গে দেখি এটিএম কার্ড কোথায়। কার্ড আমার ব্যাগে।” পরের দিনই তিনি ব্যাঙ্কে যান। দেখা যায় শুধু ওই কুড়ি হাজার টাকা নয়, ওই একই দিনে আরও কুড়ি হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে। অনিন্বিতা বলেন, “দ্বিতীয়বার টাকা তোলার কোনও এসএমএস-ও আসেনি আমার কাছে। ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি, আমার মত আরও অনেকের ঠিক একই ভাবে টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে।”

আরও পড়ুন
জেনে রাখুন, এটিএমে কী ভাবে ফাঁদ পাতছে দুর্বৃত্তরা

ব্যাঙ্কে অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিযোগ জানান গড়িয়াহাট থানায়। অনিন্বিতা বলেন, “আমি লালবাজারে ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখাতেও অভিযোগ জানিয়েছি।”

শুধু অনিন্দিতা নন— একই রকম ভাবে প্রতারিত হয়েছেন গড়িয়াহাট, রবীন্দ্র সরোবর এবং লেক থানা এলাকার অনেক বাসিন্দা, যাঁরা কানাড়া ব্যাঙ্কের গ্রাহক। ইতিমধ্যে শুধু গড়িয়াহাট এবং রবীন্দ্র সরোবর থানাতেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৩৫টির বেশি। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একই ভাবে প্রতারণা। দশ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এবং সবার ক্ষেত্রেই এই টাকা কোনও এটিএম থেকে তোলা হয়েছে। সব কটি প্রতারণা বা টাকা তোলার ঘটনাই ঘটেছে গত শনিবার এবং রবিবার (২৮ এবং ২৯ জুলাই)।

কানাড়া ব্যঙ্ক সূত্রে খবর, তাঁরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন। ব্যাঙ্ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুশোভন মুখোপাধ্যায় বলেন, “ এর আগে কলকাতায় না হলেও, এমন ঘটনা মুম্বইতে হয়েছে।” তিনি দাবি করেন— এর পিছনে আছে কার্ড ক্লোনিং। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমার সন্দেহ ওই এলাকার একাধিক বড় এটিএমে, যেখানে বেশি মানুষ টাকা তোলেন, সেখানে জালিয়াতরা স্কিমিং ডিভাইস ব্যবহার করেছে। আর সেই ডিভাইস ব্যবহার করেই তারা গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য লোপাট করেছে। সেই তথ্য দিয়েই বানানো হয়েছে নতুন কার্ড এবং সেই কার্ড দিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।”

সুশোভন বলেন, “এটিএম মেশিনের যেখানে গ্রাহক কার্ড সোয়াইপ করেন সেখানেই, কয়েক ইঞ্চি লম্বা এবং তিন-চার মিলিমিটার চওড়া একটা যন্ত্র গোপনে লাগিয়ে রাখে একটা চক্র। গ্রাহক কার্ড সোয়াইপ করা মাত্রই সেই কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ বা কার্ডের পেছনে কালো যে পট্টি রয়েছে, সেই স্ট্রিপের যাবতীয় তথ্য নকল হয়ে রেকর্ড হয় স্কিমিং ডিভাইসে।”

আরও পড়ুন
‘দাদা, জেলের মধ্যে সব সেটিং আছে’

কানাড়া ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের তদন্তেও এ রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তারা চারটি এটিএম কিয়স্ক ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে। ওই এটিএমে ব্যবহৃত কয়েকশো কার্ডকে সাময়িক ভাবে ব্লক করা হয়েছে, যাতে তাঁদের কার্ডের তথ্য দিয়ে আর টাকা হাতাতে না পারে জালিয়াতরা। কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ পূর্ব ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার কল্যান মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমরা এ রকম কিছু অভিযোগ পেয়েছি। থানা এবং সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক প্রতারণা শাখা তদন্ত করছে।”

কলকাতা পুলিশ সূ্ত্রে খবর, শুধু কানাড়া ব্যাঙ্ক নয়, এ রকম আরও কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গ্রাহকরাও একই রকম অভিযোগ জানিয়েছেন। সেগুলি ঘটেছে কলেজ স্ট্রিট এলাকায়। সেগুলিরও তদন্ত চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE