Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভরদুপুরে পুড়ল প্লাস্টিক কারখানা, আতঙ্ক

রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ আগুন লাগে বৈঁচতলার একটি প্লাস্টিকের কারখানায়। দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের তিনটি ঘরে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। প্রায় ৫০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুড়ছে প্লাস্টিকের কারখানা। ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। রবিবার দুপুরে, বাইপাস সংলগ্ন বৈঁচতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

পুড়ছে প্লাস্টিকের কারখানা। ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। রবিবার দুপুরে, বাইপাস সংলগ্ন বৈঁচতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

হাঁড়িতে বসানো চাল তখন প্রায় ফুটে এসেছে। কোলের ছেলেকে মেঝেয় বসিয়ে তা দেখতে গিয়েছিলেন মর্জিনা বিবি। হঠাৎ প্রতিবেশীদের চিল-চিৎকার। শবনম খাতুনের গলাই প্রথম কানে এসেছিল মর্জিনার। শবনম তখন চেঁচাচ্ছে, ‘‘আগুন আগুন। সবাই বেরিয়ে আয়, আগুন।’’ মর্জিনারা সবাই অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু রবিবার দুপুরের ভাত আর খাওয়া হয়নি তাঁদের। সংলগ্ন পুকুরের পাড়ে বসে তাঁরা দেখেছেন, ঘর পুড়ছে।

আজ, সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে হাতিয়াড়ার শ্রীভারতী হাই স্কুলের পড়ুয়া সুজাতা সাউ। এ দিন ই এম বাইপাসের ধারের বৈঁচতলায় তার বাড়ির সামনের কারখানাই জ্বলে ছাই হয়ে গিয়েছে। পড়া ছেড়ে দিনভর তা-ই দেখেছে সুজাতা। বলল, ‘‘পড়ব কী, তখন বুঝতেই পারছিলাম না যে কী করব। কারও যে কিছু হয়নি, এটাই বড় কথা।’’ এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। গোটা রাত কী করে মেয়ে পড়বে, সেটাই এখন বড় চিন্তা সুজাতার মা রীতাদেবীর।

রবিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ আগুন লাগে বৈঁচতলার একটি প্লাস্টিকের কারখানায়। দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের তিনটি ঘরে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। প্রায় ৫০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ এবং দমকল। কারখানার কাগজপত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও আগুনের উৎস কী, তা এ দিন রাত পর্যন্ত স্পষ্ট করে জানায়নি কোনও পক্ষই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর (সদর) অভিজিৎ পাণ্ডে বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের কারখানা ছিল। কী থেকে আগুন লেগেছে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। ভিতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, গোটা এলাকার দু’টি মিটার বক্স উড়ে গিয়েছে। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলেই অনুমান দমকলের।

বৈঁচতলা এলাকায় বেশ কিছু কারখানা আছে। দুখিরাম মাল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, একটি প্লাস্টিকের কারখানার মালিক শীতল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। এ দিন সেই কারখানা থেকেই ধোঁয়া বেরোতে দেখেন তাঁরা। দুখিরামের কথায়, ‘‘প্রথমে শীতলের কারখানায় আগুন লাগে। সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। আমরা নেভানোর চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। পরে দমকল আসে।’’

মর্জিনার পরিবারের অনেকে ওই প্লাস্টিকের কারখানাতেই কাজ করেন। মর্জিনার আত্মীয় আবদুল্লা তরফদার জানান, তাঁরা রাস্তা থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে ওই কারখানায় নিয়ে যেতেন। তা গলিয়ে প্লাস্টিকের দানা তৈরি হত। এর পরে বিক্রি করা হত ওই দানা। তিনি বললেন, ‘‘রবিবার হওয়ায় কারখানায় লোক কম ছিল। কাজ করতে করতেই কারখানার যন্ত্র থেকে কোনও ভাবে আগুন লেগে যায়। বেশি লোক থাকলে বড় বিপদ হত।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, এ দিনই অনেক প্লাস্টিকের জিনিস কিনে আনা হয়েছিল। ফলে কারখানা পুড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক টাকা দেনা রয়েছে। কারখানা না থাকলে, সেই টাকা মেটাব কোথা থেকে?’’ কারখানার মালিক শীতল বলেন, ‘‘এখনও কিছুই বুঝতে পারছি না। দেখছি কী হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fire fire accident Boinchtala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE