আচ্ছাদনে: ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ। বাগড়ি মার্কেট এলাকায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
দাউদাউ করে জ্বলছে বাগড়ি মার্কেট। সেই জ্বলন্ত বাড়ি থেকে ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে মহানগরের আকাশ।
রবিবার দিনভর এই ছবিটাই দেখল কলকাতা। আগুনের গ্রাসে বহু মানুষের রুটিরুজি তো খাক হয়েই গিয়েছে। আরও দূরপ্রসারী ক্ষতি করে দিয়ে গেল দূষণ। অগ্নিদূষণ। ধূম্রদূষণ। পরিবেশবিদেরা বলছেন, এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে শহরের পরিবেশের।
ক্যানিং স্ট্রিটের বাগড়ি মার্কেটে রয়েছে প্রচুর ওষুধের দোকান। রয়েছে প্লাস্টিকের সরঞ্জাম, রাসায়নিক ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম, প্রসাধনী সামগ্রী-সহ নানান জিনিসপত্রের দোকানও। পরিবেশবিদেরা বলছেন, এই সব দাহ্য বস্তু পুড়ে নির্গত হচ্ছে কার্বন, সালফার ও নাইট্রোজেনের নানা ধরনের যৌগ গ্যাস। তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পরিবেশে।
ধোঁয়ার ধাক্কা এ দিনই টের পেয়েছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মী, দমকলকর্মী, আমজনতা। ধোঁয়া নাকেমুখে ঢুকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বমিও করেছেন। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় দুই দমকলকর্মী-সহ ছ’জনকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের শিক্ষক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ধরনের দাহ্য বস্তু পুড়লে তৈরি হয় যৌগ গ্যাস সালফার অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড। সেই সঙ্গে আরও বেশ কিছু বিষাক্ত গ্যাসও তৈরি হতে পারে। এলাকাটা ঘিঞ্জি, তাই ওই গ্যাস মানুষের শরীরে ঢুকলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।’’
আগুন-গ্রাসে: পৌঁছেছে দমকল। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ প্রতিদিন শহরের বায়ুদূষণের যে-সূচক বার করে, এ দিন তাতেও একটা বদল লক্ষ করা গিয়েছে। শনিবার শহরে ধূলিকণার সূচক-মাত্রা ছিল ৭৭.৭। রবিবার তা হয়ে গিয়েছে ৮৭.৬! বৃদ্ধি প্রায় ১০। নাইট্রোজেন অক্সাইড যৌগের মাত্রা শনিবারের (২৩.৪) তুলনায় প্রায় সাত ধাপ (৩১.৬) বেড়েছে। ছুটির দিনে দূষণ সাধারণ ভাবে কম হওয়ার কথা। এই বৃদ্ধির সঙ্গে বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ভূমিকা রয়েছে, এখনই এমন কথা সরাসরি বলছেন না পরিবেশবিদেরা। তবে দুইয়ের যোগসূত্রের কথা উ়়ড়িয়েও দিচ্ছেন না তাঁদের একাংশ।
পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, দাহ্য বস্তু পুড়লে বাতাসে কার্বনের মাত্রা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক, রাসায়নিক-সহ নানান ধরনের জিনিসপত্র একসঙ্গে পুড়েছে। ফলে সব মিলিয়ে ঠিক কী ধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করেছে, এখনই তা বলা মুশকিল। ভিতরে ঠিক কী কী ধরনের রাসায়নিক ছিল, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ারপরেই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়। তাঁর মতে, এই সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। তার সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস মিশে বাতাসে ধোঁয়াশা তৈরি করতে পারে। স্বাতীদেবী বলেন, ‘‘এই ধোঁয়ার যাবতীয় প্রভাব এখনই বোঝা না-ও যেতে পারে। কিন্তু এর প্রভাব একেবারেই পড়বে না, এমন কথা বলা যায় না। যত বেশি ক্ষণ ধরে আগুন জ্বলবে, ততই বাড়বে ক্ষতি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy