Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্লান্তি নিয়েও ‘ট্রিপ’-এ চালক, নজরদারির দায় নিয়ে ঠেলাঠেলি

দিন রাত যত ‘ট্রিপ’, তত টাকা! আয়ের মিটার বাড়াতেই অ্যাপ ক্যাব এবং ছোট গাড়ির চালকেরা বিশ্রাম না নিয়ে একটানা গাড়ি চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। যার ফলে কখনও ক্লান্ত হাত স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিচ্ছে ফুটপাতে।

বাইপাসে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। ফাইল চিত্র

বাইপাসে দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ি। ফাইল চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
ফিরোজ ইসলাম শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

ক্লান্তির জেরে ঘটছে একের পরে এক বিপদ। কিন্তু ক্লান্তি মেটানোর দাওয়াই নেই। কারণ, একে অন্যের উপরে দায় চাপানোর সেই পুরনো রোগ এখনও চলছে।

দিন রাত যত ‘ট্রিপ’, তত টাকা! আয়ের মিটার বাড়াতেই অ্যাপ ক্যাব এবং ছোট গাড়ির চালকেরা বিশ্রাম না নিয়ে একটানা গাড়ি চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। যার ফলে কখনও ক্লান্ত হাত স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দিচ্ছে ফুটপাতে। কখনও গতির তুফান তুলে গাড়ি সজোরে ধাক্কা মারছে বাতিস্তম্ভে। বুধবারই বাইপাসে এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয়েছে সুদীপ চক্রবর্তী নামে এক কর্মীর। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, একটানা গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত চালক স্টিয়ারিংয়ে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। চালককে পরে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কী?

গাড়িচালক, বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা, পরিবহণ দফতর এবং পুলিশ— সকলেই দায় চাপাচ্ছেন একে অন্যের উপরে। বুধবারের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া চালক দাবি করেছেন, সংসার এবং গাড়ির কিস্তির টাকা তুলতেই তাঁকে এ ভাবে গাড়ি চালাতে হয়। সারা বছরই সচেতনতার প্রচার চালানো হয়, বলে দায় সারছেন লালবাজারের এক পুলিশকর্তা। পরিবহণ দফতর বলছে, সচেতনতা নিয়ে প্রচার তো বছরভরই চলে। পুলিশ বা রোড সেফটি কমিটি পরিবহণ দফতরে প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখা হবে। দফতরের দাবি, বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা এবং অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাকেও দেখতে হবে, ক্লান্ত চালকের পাল্লায় পড়ে যাত্রীরা যেন বিপদে না পড়েন। বেসরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলি অবশ্য মেনে নিচ্ছে, চালকেরা ক্লান্ত কি না, তা বোঝার পরিকাঠামো তাদের নেই। উল্টে চালকের উপরেই দোষ চাপিয়ে সংস্থা বলেছে, ‘‘বাড়তি আয়ের টানে চালকেরা ওভারটাইমে কাজ করতে চান।’’

মধ্য কলকাতার একটি অফিসের গাড়িচালক এই দাবি উড়িয়ে বলেন, ‘‘পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে আমাদের চুক্তি থাকে। ফলে তাঁরা বাড়তি সময় থাকতে বললে, আমরা থাকতে বাধ্য। বাড়তি টাকা সামান্যই, তার থেকে আমাদের ছেড়ে দিলে অ্যাপ-ক্যাব চালিয়ে বেশি আয় হবে।’’ সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় গাড়ি চলে হাওড়ার এক পরিবহণ সংস্থার। সেখানকার চালক শ্যাম থাপা বলেন, ‘‘কিস্তিতে গাড়ি কিনেছি। নিয়ম অনুযায়ী, ১২ ঘণ্টা চালাতে হয়। কিন্তু যা পাই তাতে চলে না।’’

যাত্রীরা অবশ্য বলছেন, অফিসের গাড়ি বা অ্যাপ-ক্যাব, সবেতেই ভরসা এই চালকেরা। অনেকে আবার দায় চাপাচ্ছেন অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার প্রকল্পের উপরে। অ্যাপ-ক্যাবের ক্ষেত্রে চালকেরা কত ‘ট্রিপ’ করছেন, তার উপরে প্রাপ্য নির্ভর করে। রাতে ‘ট্রিপ’ পিছু আয় বেশি। অভিযোগ, তাই অনেকেই সারারাত গাড়ি চালান। এক যাত্রী ধৃতিমান জানা বলেন, ‘‘কে দেখবেন কে দেখবেন না, সেই ঠেলাঠেলিতে ভুগছি। পরিবহণ দফতর প্রয়োজনে চালকদের কাজের সময় বেঁধে বিধি তৈরি করুক।’’

পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘রাস্তার বিষয়টি ট্র্যাফিকের দেখার কথা। ট্র্যাফিকের তরফে প্রস্তাব এলে আমরা বিভিন্ন সময়ে অর্ডার ইস্যু করি। তা ছাড়া রাজ্যের মুখ্য সচিবের অধীনে রোড সেফটি কমিটি রয়েছে। পরিবহণ সচিবও তাঁর সদস্য। তাঁরা যদি কোনও প্রস্তাব দেন অবশ্যই দেখব।’’ কলকাতা পুলিশ কী কোনও প্রস্তাবের ব্যাপারে ভাবছে? পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) মীতেশ জৈনকে বারবার ফোন করা হলে ধরেননি। উত্তর মেলেনি মেসেজেরও।

তা হলে প্রস্তাব না আসা পর্যন্ত উপায়? উত্তর জানা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

App Cab Accident Trip Driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE