Advertisement
০৪ মে ২০২৪

প্রসূতি-মৃত্যু নিয়ে তদন্তে স্বাস্থ্য ভবন

বৃহস্পতিবার বিকেলে আলিপুরের ওই হাসপাতালে মেয়ের জন্ম দেন পৌলোমী। তাঁর স্বামী জয়ন্ত সান্যালের অভিযোগ, রাত পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী স্বাভাবিক ছিলেন। পরদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁকে ফোনে জানানো হয়, পৌলোমীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।

পৌলোমী ভট্টাচার্য সান্যাল

পৌলোমী ভট্টাচার্য সান্যাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

উনত্রিশ বছরের তরুণীর মৃত্যুর কারণ ‘হেল্‌প (এইচইএলএলপি) সিনড্রোম’। সোমবার এমনই দাবি করেছেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালের ডেপুটি সুপার সপ্তর্ষি বসু।

এ দিনই পৌলোমী ভট্টাচার্য সান্যাল নামে ওই তরুণীর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে এডিএইচএস (মেটারনাল ডেথ) সন্তোষ রায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে প্রসূতি-মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার অডিট করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালে সেই সুযোগ নেই। তাই কী কারণে মৃত্যু, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’

বৃহস্পতিবার বিকেলে আলিপুরের ওই হাসপাতালে মেয়ের জন্ম দেন পৌলোমী। তাঁর স্বামী জয়ন্ত সান্যালের অভিযোগ, রাত পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী স্বাভাবিক ছিলেন। পরদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁকে ফোনে জানানো হয়, পৌলোমীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ ওই তরুণীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পৌলোমীর ভাই, চিকিৎসক সাগ্নিক ভট্টাচার্য দিদির চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল বলেই মনে করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, পৌলোমীর হিমোগ্লোবিন দশ থেকে চারে নেমে গিয়েছিল। আচমকা হিমোগ্লোবিন এত দ্রুত নামতে পারে না। কোনও ভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে বলে বিশ্বাস তাঁর।

এ দিন হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বলেন, ‘‘রোগীকে বাঁচাতে যা করণীয়, সবই করেছি। প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে কী ঘটল? এটা হল, ‘হেল্‌প সিনড্রোম’।’’ সাগ্নিকের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘তিন দিন পরে হাসপাতাল বুঝল, দিদির মৃত্যুর কারণ হেল্‌প সিনড্রোম! এত দিন তো বলছিল, কেন মৃত্যু, ওরাও বুঝতে পারছে না। অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর শারীরিক অবস্থা নজরে রাখলেই তো সমস্যার আভাস পাওয়ার কথা। আমি ভুল প্রমাণিত হলে চিকিৎসক হিসেবে শান্তি পাব।’’

‘হেল্‌প সিনড্রোম’ কী?

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রক্তকণিকা নিজেরাই ফাটতে শুরু করলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। রক্তচাপজনিত লিভারের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁরাই মূলত আক্রান্ত হন। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।’’ রবিবার সাগ্নিকের বক্তব্য ছিল, তাঁর দিদি জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। তাঁকেই চিকিৎসায় গাফিলতির শিকার হতে হল! এ দিন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর সভাপতি অর্জুন দাশগুপ্ত ফেসবুকে যে পোস্ট করেছেন, সেখানেও হেল্‌প সিনড্রোমের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘সন্তান জন্মানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্তকণিকারা নিজেরাই ফাটতে শুরু করলে লিভার কাজ করা বন্ধ করে দেয়।’ অর্জুনের বক্তব্য, চিকিৎসক যদি রোগীর জটিলতা ঠিক সময়ে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেন, তবেই গাফিলতির অভিযোগ ওঠা উচিত।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক তপন নস্কর জানান, সরকারি হাসপাতালে প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পরে একটি নোট দেওয়া হয়। রোগীর কোথায় কোথায় রক্তক্ষরণের স্থান রয়েছে, সেগুলি বন্ধ করা হয়েছে কি না, রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন, তা ওই নোটে লেখা থাকে। রোগীর নাড়ির স্পন্দন, রক্তচাপ, প্রস্রাবের মাত্রা কেমন, তা নিরীক্ষণ করা হয়। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে প্রথম দু’ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হলে নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যাবে। রক্তচাপ কমবে। হেল্‌প সিনড্রোম হলে রক্তক্ষরণ হতেই হবে। পাল্‌স, রক্তচাপ দেখে সেটা বোঝা উচিত।’’

এই নজরদারিতে ফাঁক ছিল বলেই বিশ্বাস পরিজনদের। ওই হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বলেন, ‘‘তরুণীর মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের এনে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছিল। নজরদারিতে গাফিলতি ছিল না।’’

পৌলোমীর মৃত্যু নিয়ে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে মৃতার পরিবার। বৃহস্পতিবার আলিপুর থানা থেকে ওই হাসপাতাল পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল হবে বলে জানান মৃতার স্বামী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE