বছর দশেকের মেয়েটিকে কেউ বা কারা ফেলে গিয়েছিলেন হাওড়া স্টেশনে। রেলপুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাওড়া শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে লিলুয়ার সরকারি হোমে পাঠায়। কিন্তু মাত্র কয়েক দিন পরেই বাচ্চাটিকে শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বারুইপুরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমে। ওই বালিকাকে না রাখার কারণ হিসেবে লিলুয়া হোম কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, তার রক্ত পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে! হাজারো প্রচার সত্ত্বেও এইচআইভি নিয়ে ছুতমার্গ যে এখনও কাটেনি, এই ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
উপরের ঘটনাটি উদাহরণ মাত্র। ওই দশ বছরের বালিকাই শুধু নয়। এমন ঘটেছে আরও বহু ক্ষেত্রে। কোনও শিশুর রক্ত পরীক্ষায় এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়লেই রাজ্যের সরকারি হোমগুলিতে তাদের না রেখে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বারুইপুর এবং পূর্ব বর্ধমানের দু’টি হোমে। ওই দু’টি হোমই চালায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পূর্ব বর্ধমানের হোমে শুধু ছেলেদের রাখা হয়। ফলে কোনও শিশুকন্যার রক্তে এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গেলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বারুইপুরের হোমে।
অথচ এই মুহূর্তে গোটা রাজ্যে ১৯টি সরকারি হোম রয়েছে, যার ১০টি মেয়েদের এবং ৯টি ছেলেদের। কিন্তু কোনও হোমই এইচআইভি পজিটিভ শিশুকে রাখে না।
এর কারণ কি? সমাজকল্যাণ ডিরেক্টরেটের এক কর্তা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘এইচআইভি পজিটিভ বাচ্চাদের রাখার মতো পরিকাঠামো সরকারি হোমগুলিতে নেই। ওই পরিকাঠামো যেখানে আছে, সেখানে তাদের পাঠানো হয়।’’ যদিও এইচআইভি বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক শুভাশিস ভট্টাচার্য বলছেন, এমন বাচ্চাদের রাখার জন্য বিশেষ পরিকাঠামো দরকার হয় না। কারণ, স্পর্শ থেকে এইচআইভি ছড়ায় না।
একই বক্তব্য বারুইপুরের হোমের কর্ণধার কল্লোল ঘোষের। তিনি বলেন, ‘‘এইচআইভি পজিটিভ হলে কী করা যায় এবং যায় না, বাচ্চারা একটু বড় হলে তা তাদের বোঝানো প্রয়োজন। একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং গুরুতর অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া আর বিশেষ কোনও পরিকাঠামোর দরকার পড়ে না।’’ কল্লোলবাবু আরও জানান, তাঁদের হোমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং সাধারণ শিশুরাও থাকে। এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের থেকে কোনও রকম সংক্রমণ ছড়ায় না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কেন এমন শিশুরা এলে সরকারি হোমগুলি তাদের না রেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে পাঠায়? এ বিষয়ে কল্লোলবাবু বলছেন, ‘‘এর একমাত্র কারণ সচেতনতার অভাব। এমন বাচ্চাদের রাখতে ভয় পান হোম কর্তৃপক্ষ এবং সেখানকার কর্মীরা। এর ফলে ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হওয়ায় অনেক বাচ্চা মারাও যায়।’’ এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল গত বছরের নভেম্বরে। জলপাইগুড়ির সরকারি হোম ‘কোরক’ থেকে বছর দশেকের এক বালককে পাঠানো হয়েছিল বারুইপুরের হোমে। কিন্তু এক দিনের মধ্যে বাচ্চাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই দিন দশেক পরে মারা যায় সে।
সেই ঘটনা প্রসঙ্গে ‘কোরক’ হোমের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁদের ওখানে বাচ্চাটিকে রাখার আলাদা পরিকাঠামো না থাকায় তাঁরা সমাজকল্যাণ ডিরেক্টরেটের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাদের নির্দেশেই ওই বালকটিকে কলকাতায় পাঠানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাচ্চাটিকে আলাদা রাখার প্রয়োজন হয়েছিল কেন? হোম কর্তৃপক্ষ কি তা হলে অন্য বাচ্চাদের সংক্রমণের ভয় পাচ্ছিলেন? হোমের একটি সূত্রের খবর, ওই বালকটি এইচআইভি পজিটিভ জানার পরে হোমের রাঁধুনি কাজ ছেড়ে দেন। তাতেই ভয় পেয়ে কর্তৃপক্ষ বাচ্চাটিকে অন্যত্র পাঠানোর জন্য ডিরেক্টরেটের কাছে আবেদন করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy