Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মৃতপ্রায় শিশুকে সুস্থ করে ঘরে ফেরাল হাসপাতাল

ম্প্রতি উত্তর শহরতলির একটি নার্সিংহোমে নির্ধারিত সময়ের আগেই সুনীতা সিং নামে এক প্রসূতি দেড় কেজি ওজনের এক সদ্যোজাতের জন্ম দেন। তার অত্যধিক শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেন। দেড় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালে যখন শিশুটিকে আনা হয়, তখন তার হৃদ্‌যন্ত্র প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ফেরা: চিকিৎসকের কোলে সেই শিশু। রয়েছেন বাবা-মাও। নিজস্ব চিত্র

ফেরা: চিকিৎসকের কোলে সেই শিশু। রয়েছেন বাবা-মাও। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫০
Share: Save:

অত্যধিক শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে সদ্যোজাত শিশুটিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তত ক্ষণে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার হৃদ্‌যন্ত্র। প্রায় সাদা হয়ে যাওয়া সেই সদ্যোজাতকে বাঁচাতে দ্রুত কার্ডিয়ো পালমোনারি রিসাসিটেশন (সি পি আর) শুরু করা হয়। হৃদ্‌যন্ত্র ফের চালু করতে অ্যাড্রিনালিন ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয় তাকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিন বার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয় শিশুটি। অবশেষে সারা রাতের চেষ্টায় স্থিতাবস্থায় আনা হয় তাকে।

পরের দিন ভেন্টিলেটরে রাখা শিশুটির কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তার নিউমোথোরাক্স (ফুসফুস ফেটে চেস্ট ওয়াল এবং ফুসফুসের মাঝে হাওয়া জমে যাওয়া) হয়েছে। জমে থাকা সেই হাওয়া বিশেষ প্রক্রিয়ায় বার করা হয়। শিশুটির এক্স-রে করে দেখা যায়, নিউমোথোরাক্সের কারণে তার ডান ফুসফুস চুপসে শরীরে অক্সিজেনের অভাবে এমন সঙ্কট হয়েছে। শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানান, শিশুটির ব্লাড-গ্যাস পরীক্ষায় পিএইচ মাত্রা ৬.৪ ধরা পড়ে। যেখানে এক জন সুস্থ মানুষের (শিশু এবং পূর্ণবয়স্ক নির্বিশেষে) রক্তে পিএইচ-এর স্বাভাবিক মাত্রা ৭.২৫–৭.৪। শিশু চিকিৎসকদের মতে, পিএইচ ৬.৮-এর নীচে নেমে গেলে সচরাচর কেউ বাঁচেন না। ওই অবস্থায় শরীরে অ্যাসিড জমে হৃদ্‌যন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাড়তে থাকে ল্যাকটোজ়ের পরিমাণ। কোনও শিশুর ল্যাকটোজ় দুইয়ের নীচে থাকার কথা। এ ক্ষেত্রে শিশুটির দেহে ল্যাকটোজ়ের পরিমাণ ২৫ হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন সুমিতা। শহরের চিকিৎসকদের মতে, সদ্যোজাতের ক্ষেত্রে নিউমোথোরাক্স বিরল নয়। তবে রক্তে পিএইচ-এর এই মাত্রা প্রায় শোনা যায় না বললেই চলে।

এমন অবস্থা থেকে শিশুটিকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানোর ঘটনায় উচ্ছ্বসিত তার পরিবার। সম্প্রতি উত্তর শহরতলির একটি নার্সিংহোমে নির্ধারিত সময়ের আগেই সুনীতা সিং নামে এক প্রসূতি দেড় কেজি ওজনের এক সদ্যোজাতের জন্ম দেন। তার অত্যধিক শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেন। দেড় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালে যখন শিশুটিকে আনা হয়, তখন তার হৃদ্‌যন্ত্র প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানাচ্ছেন, ওই শারীরিক অবস্থা থেকে শিশুটিকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো অবশ্যই কৃতিত্বের। তবে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সদ্যোজাতকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কেন?’’ তিনি বলেন, ‘‘পরিকাঠামোর অভাবে যখন শিশুদের অন্যত্র রেফার করা হয়, তখন পথেই অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়। যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত পরিবহণ, এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের মতো পরিষেবা শুরুর কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।’’

এ সব আপাতত ভাবাচ্ছে না শিশুটির বাবা, সিআরপিএফে কর্মরত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট অজিত কুমারকে। শুক্রবারই হাসপাতাল থেকে সন্তানকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন দম্পতি। অজিতের কথায়, ‘‘সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব ডাক্তার ম্যাডামের কাছে। উনি না থাকলে কী হত ভাবতে পারছি না।’’ সুমিতার উত্তর, ‘‘বেশি কিছু নয়, চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPR Breathing Trouble Live Saving Drug
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE