Advertisement
০৩ মে ২০২৪

দেখা করতে কেশরীকে চিঠি সুরঞ্জনের

কলা বিভাগের প্রবেশিকা নিয়ে শিক্ষক-পড়ুয়াদের আন্দোলনের মধ্যে সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষকে নিয়ে একসঙ্গেই অব্যাহতির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু।

চিঠি দিয়ে আচার্যের সাক্ষাৎ চেয়েছেন সুরঞ্জন দাস। —ফাইল চিত্র।

চিঠি দিয়ে আচার্যের সাক্ষাৎ চেয়েছেন সুরঞ্জন দাস। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৮
Share: Save:

আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে রাজভবনে চিঠি দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। বৃহস্পতিবার রাতে রাজভবনের এক মুখপাত্র জানান, সুরঞ্জনবাবু চিঠি দিয়ে আচার্যের সাক্ষাৎ চেয়েছেন। তবে আচার্য সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময় দেননি।

কলা বিভাগের প্রবেশিকা নিয়ে শিক্ষক-পড়ুয়াদের আন্দোলনের মধ্যে সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষকে নিয়ে একসঙ্গেই অব্যাহতির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু। তবে বুধবার রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ইস্তফার ইচ্ছার ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনও তথ্য নেই। প্রবেশিকার প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্তের পরে, গত দু’দিন ধরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না। তার পরেই আচার্যকে সুরঞ্জনবাবুর চিঠি লেখার ঘটনায় তাঁর পদত্যাগের জল্পনা জোরদার হয়েছে।

উপাচার্যের পদত্যাগের জল্পনা নিয়ে এ দিন সকালে বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের এক অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘ওঁর (উপাচার্য) পদত্যাগের চিঠি আমার কাছে আসেনি। উপাচার্য আগে পদত্যাগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আসুন। তার পরে ভাবব। বাইরে থেকে কিছু চাপিয়ে দেব না। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনও স্তরেই আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে উপাচার্যই যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

জল্পনা শুরু হয়েছে উপাচার্য আর সহ-উপাচার্যের দ্বিমুখী কার্যক্রম নিয়েও। উপাচার্য দু’দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে না-গেলেও দু’দিনই হাজিরা দিয়েছেন এবং যথাযথ ভাবে কাজ করেছেন সহ-উপাচার্য প্রদীপবাবু। দু’জনের পৃথক কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সহ-উপাচার্য ইস্তফার প্রশ্নে উল্টো রাস্তায় হাঁটছেন? এই বিষয়ে প্রদীপবাবু অবশ্য এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

যাদবপুরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। কয়েক মাস আগে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের র‌্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ নেমেছে যাদবপুর। তার জন্য ‘পাবলিক পারসেপশন’ বা জন-সংবেদনায় কম নম্বর পাওয়াকে দায়ী করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির জেরে জন-সংবেদনায় নম্বর আরও কমল বলেই মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষাবিদ, এমনকি কর্তৃপক্ষের একাংশও। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পদ খালি পড়ে থাকার জন্য এই অচলাবস্থাকেই দায়ী করছেন অনেকে।

শিক্ষা শিবিরের মত, সম্প্রতি পড়ুয়াদের আন্দোলনে এবং উপাচার্যকে যে-ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে, তাতে সেখানকার সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কর্মসমিতির ঘনঘন ভোলবদল এবং উপাচার্যের অব্যাহতির ইচ্ছা প্রকাশও সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে বলে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের অভিমত।

এ বছর যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে রেকর্ড সংখ্যক আসন ফাঁকা থেকে গিয়েছে। রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১২৭৩টি আসনের মধ্যে ২৫৪টি আসন ফাঁকা। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ-রকম আগে কখনও হয়নি। গত বছর প্রায় ১৫০টি শূন্য আসন ছিল।’’ কর্তৃপক্ষের একাংশের ধারণা, এর জন্যও সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা দায়ী। কারণ ভর্তির তারিখ ছিল ৩ থেকে ৭ জুলাই। আর ঠিক সেই সময়েই গোলমাল চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তবে শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাবলিক পারসেপশনের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। পুরোটাই আপেক্ষিক।’’ আবুটা-র যুগ্ম সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এবং আন্দোলনে রুচি ও সংস্কৃতিগত দিকটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।’’

আন্দোলনকারী পড়ুয়া দেবরাজ দেবনাথ বলেন, ‘‘জনমানসে গোটা পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক। তবে এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কোনও উক্তি করে থাকলে সেটা আমাদের দায় নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suranjan Das Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE