অভিযুক্ত অধ্যাপক কনক সরকার। —ফাইল চিত্র
জাতীয় ও রাজ্য মহিলা কমিশন ইতিমধ্যেই তাঁর মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তলব করেছে। এ বার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কনক সরকারের ক্যাম্পাসে ঢোকা আপাতত বন্ধ করে দিল। নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। ওই শিক্ষকের কীর্তিতে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। উচ্চশিক্ষা দফতর এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে খোঁজখবর নিচ্ছে।
ফেসবুকে মেয়েদের কুমারীত্বের সঙ্গে ‘সিল্ড’ বোতল কিংবা বিস্কুটের ‘সিল্ড’ প্যাকেটের তুলনা করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন কনকবাবু। কেন কুমারী মেয়ে বিয়ে করা দরকার, সেই বিষয়ে সওয়াল করেছেন তিনি। বুধবার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক-পড়ুয়া কমিটির বৈঠক হয়। সেখানেই উঠে আসে, শুধু ফেসবুক নয়, ওই অধ্যাপক ক্লাসেও ছাত্রীদের উদ্দেশে লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য করে থাকেন। মন্তব্য করেন জাত এবং ধর্ম তুলেও। কনকবাবু যাতে আপাতত কোনও ক্লাস করতে না-পারেন, কমিটির পক্ষ থেকে সেই সুপারিশ করা হয়। বিভাগীয় প্রধান ওমপ্রকাশ মিশ্র জানান, ওই অধ্যাপককে এখন ক্লাস করতে দেওয়া হবে না। বিভাগের পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টি উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে জানানো হয়।
উপাচার্য পরে জানান, কনকবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্নাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি) তদন্ত করবে। মঙ্গলবার কনকবাবুর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করে রাজ্য মহিলা কমিশন সাত দিনের মধ্যে কনকবাবুকে তাদের সামনে হাজির হতে বলেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন এর আগেই রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে ওই অধ্যাপকের মন্তব্যের তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছে। সুরঞ্জনবাবু জানান, এই তিন তদন্ত শেষ না-হলে কনকবাবুকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ‘‘এই সময় পঠনপাঠন, পরীক্ষার কোনও প্রক্রিয়ায় ওই অধ্যাপককে যুক্ত রাখা হবে না,’’ বলেন উপাচার্য।
কনকবাবুর মন্তব্যে শিক্ষামন্ত্রীও যে খুবই অসন্তুষ্ট, তাঁর বক্তব্যে সেটা স্পষ্ট। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এক জন অধ্যাপকের বোঝা উচিত, এ-রকম মন্তব্য ছাত্রীদের পক্ষে কতটা অসম্মানের হয়। এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত।’’ তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে।
যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী এবং কলা বিভাগের বিদায়ী ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সন সোমাশ্রী চৌধুরী এ দিন জানান, সাময়িক ভাবে ক্যাম্পাসে আসতে বারণ করাই শুধু নয়। তাঁরা চান, কনকবাবুকে শিক্ষকপদ থেকে পুরোপুরি অপসারণ করা হোক।
ঘোরতর বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেও কনকবাবু জানিয়েছিলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকেই তিনি যা করার করেছেন। ফেসবুকে তিনি তাঁর মত প্রকাশ করতেই পারেন। তবে সোমবার কনকবাবু তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল নিষ্ক্রিয় করে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy