সন্ধ্যারানি পাল। নিজস্ব চিত্র
ভরসন্ধ্যায় গঙ্গার ধারে বসে ছিলেন একা বৃদ্ধা। রাত বাড়লেও উঠছিলেন না। এমন দৃশ্য দেখে খানিকটা অবাকই হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সচরাচর এমন তো ঘটে না।
বাসিন্দারা বৃদ্ধার কাছে যেতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি। লোকজনই খবর দেন বীজপুর থানায়। পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, গঙ্গার ঘাটে গিয়ে তাঁরা দেখেন, অবিরাম কেঁদে চলেছেন বৃদ্ধা। স্থানীয় কয়েক জন পুলিশকে জানান, বৃদ্ধার সঙ্গে ছিলেন এক জন পুরুষ। কিন্তু পরে ওই ব্যক্তিকে আর দেখা যায়নি। পুলিশের ধারণা, কেউ ওই বৃদ্ধাকে ফেলে পালিয়ে গিয়েছে।
পুলিশকে বৃদ্ধা জানিয়েছেন, তাঁর নাম সন্ধ্যারানি পাল। বয়স সত্তরের কিছু বেশি। বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে, মেহেন্দিগঞ্জ থানা এলাকার পাতারহাটে। হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব সে দেশের হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের মাধ্যমে বরিশালে বৃদ্ধার খোঁজ চালাচ্ছে। রবিবার রাত পর্যন্ত অবশ্য তাঁর বাড়ির খোঁজ মেলেনি। গত সাত দিন তিনি থানাতেই আছেন। থানায় শিশুদের জন্য একটি ঘর রয়েছে। আপাতত সেটাই ঠিকানা বৃদ্ধার। তাঁর দেখভাল করছেন পুলিশকর্মীরাই।
থানায় আনার পরে বৃদ্ধাকে জল এবং খাবার দেওয়া হয়েছিল। পুলিশকর্মীরা তাঁর সঙ্গে নানা কথা বলতে থাকেন। তাতে কিছুটা সহজ হন তিনি। তার পরেই নিজের নাম-ঠিকানা জানান। পুলিশ জানিয়েছে, দিন দু’য়েক পরে ওই বৃদ্ধা আরও একটু সহজ হন। পুলিশকর্মীদের জানান, তাঁর স্বামীর নাম লালবিহারী পাল। তিনি অবশ্য বেঁচে নেই। তবে তাঁর ছেলে রয়েছেন। নাম সঞ্জয় পাল। নাতির নাম অভি অথবা অপু।
পুলিশ জানিয়েছে, নাম-ঠিকানা বললেও বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না বৃদ্ধা। কী ভাবে হালিশহরে এলেন, তা-ও মনে করতে পারছেন না। কেউ কি তাঁকে ফেলে চলে গিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলছেন। কিন্তু কে ফেলে গেল? কোনও উত্তর নেই। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন। এক পুলিশ আধিকারিক বলছেন, ‘‘এমন করে তাকিয়ে থাকছেন, আমরা আর জোর করতে পারছি না। শুধু বলছেন, আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দাও বাবা।’’
ঘটনাটি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তাঁরা বিষয়টি জানান বাংলাদেশের হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবকে। বৃদ্ধার দেওয়া ঠিকানা ধরে গত দু’দিন খোঁজ চালাচ্ছে তারাই। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির সন্ধান না মিললে বৃদ্ধাকে কোনও হোমে রাখা হবে।
বরিশালের রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য সৈয়দ সামসুল তুহিন বলেন, ‘‘মেহেন্দিগঞ্জ অনেক বড় এলাকা। আমরা সব এলাকায় খোঁজ করছি। রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থানীয় শাখাকেও জানানো হয়েছে। পাতারহাটের স্কুলগুলিতেও বৃদ্ধার ছবি দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। তাঁর বাড়ি ওই এলাকায় হলে, আমরা খুঁজে বার করবই।’’ পুলিশ জানিয়েছে, মাঝে একবার বদরহাট বলে একটি জায়গার নাম বলেছিলেন বৃদ্ধা। হাবড়ায় বদরহাট বলে একটি জায়গা রয়েছে। সেখানেও খোঁজ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy