গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ইচ্ছে হলআর পছন্দ মতো রাজনীতিক বা মনীষীদের মূর্তি রাস্তার মোড়ে অথবা পার্কে বসিয়ে দিলাম। কাউন্সিলরদের এমন ‘কার্যকলাপ’-এ ইতি টানতে চাইছে কলকাতা পুরসভা।
ইতিমধ্যেই কলকাতায় মূর্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০। কর্মীর অভাবে এই বিপুল সংখ্যক মনীষী, রাজনীতিক, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূর্তির নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে ‘হিমশিম’ খাচ্ছে পুরসভা। মূর্তির সংখ্যা আরও বাড়লে, সমস্যা বাড়বে।
যদিও পুরসভার এই সিদ্ধান্তে বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি রাজনীতির গন্ধই পাচ্ছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙার পর যেভাবে ‘রাজনীতি’ হয়েছিল, সে বিষয়টি মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে বিরোধীরা।
সম্প্রতি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে নেতাজির মূর্তি ভেঙেছে দুষ্কৃতীরা। বেহালাতেও গাঁধী মূর্তিতে কালি মাখিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই সব ঘটনার পর একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে রাজনীতির কারবারিরা। নতুন করেও বেশ কিছু জায়গায় মূর্তি বসেছে। ধর্মতলায় লেনিন মূর্তিতে হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয়েছিল। এখনও শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে নজরদারি রয়েছে। আরও মূর্তির সংখ্যা বাড়লে, তার নিরাপত্তা অথবা দেখভাল কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরে। তাই কাউন্সিলরদের বার্তা, আর যেখানে সেখানে মূর্তিস্থাপন করা হবে না। যেগুলি রয়েছে, সেগুলিই দেখভাল করুক।
এ বিষয়ে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “এমনিতেই কলকাতায় অনেক মূর্তি রয়েছে। আরও মূর্তি বসলে দেখভাল করবে কে? কর্মীর অভাব। যত্রতত্র মূর্তি না বসানোই ভাল।”
কলকাতা পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘যে মূর্তিগুলি রয়েছে, সেগুলিই রক্ষা করতে পারছে না এই পুর বোর্ড। স্থানীয় বাসিন্দাদেরই নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে রাখা যেতে পারত। তার জন্য এমন কিছু টাকা খরচা হত না। এই মনীষীরাই তো আমাদের জীবনের অনুপ্রেরণা।’’তাঁর অভিযোগ, “এতকিছুতে টাকা নষ্ট হয়, বেশ কয়েকটি দুর্নীতির ঘটনাও সামনে এসেছে। আর ভাল কাজে টাকা ঢালতে হবে, সেটাকে অপচয় মনে হয়। আসলে এই পুর বোর্ড ভয় পেয়েছে।”
বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাস বলেন, “দরকার পড়লে কর্মী নিয়োগ করতে হবে।মনীষীরা আমাদের আদর্শ। যদি কোথাও মূর্তি বসাতে গিয়ে, সমস্যা দেখা দেয়, তখন এর জবাব তৈরি থাকবে।” এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধসিপিএম কাউন্সিলর, কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রত্নারায় মজুমদার। তিনি বলেন, “এতো জোর করে তৃণমূলের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আসলে নিজেদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছে এই পুর বোর্ড।”
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে খোলা আকাশের নীচে গণধর্ষণ খাস কলকাতায়!
আরও পড়ুন: আর নয় স্থানীয় নির্বাচনে? ভাবছে প্রদেশ কংগ্রেস
কলকাতায় মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার কথা বলা হলেও, মূর্তি নিয়ে যে ভবিষ্যতে ফের কলকাতায় উত্তাল হবে না, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই লেলিন মূর্তির ওপর আঘাত আসে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদের মূর্তিতে কালি লেপে দেয় অতিবাম সংগঠনের সমর্থক একদল পড়ুয়া। বিজেপি এর প্রতিবাদ জানিয়ে ওই মূর্তিটি দুধ দিয়ে শোধন করার হুঁশিয়রি দেয়। সেই কর্মসূচি আটকাতে পথে নামে তৃণমূল। পার্কটি বন্ধ করে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। ঠিক একইভাবে দেশর বিভিন্ন জায়গাতেও মূর্তিভাঙার ‘সংস্কৃতি’ ছড়িয়ে পড়ে। তাই আগে থেকেই সাবধানী পুরসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy