Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আলিপুর ক্যাম্পাসে বটগাছের নীচেই আন্তর্জাল

ইতিহাস বিভাগের একাধিক পড়ুয়ার অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ঢোকার পর থেকে মোবাইলের সংযোগ কার্যত থাকে না। এই সমস্যা কয়েক বছর ধরে, বর্তমানে যা ক্রমেই বাড়ছে। ক্যাম্পাসের কাছেই রয়েছে মহিলা সংশোধনাগার।

হাপিত্যেশ: এই সেই বটগাছ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

হাপিত্যেশ: এই সেই বটগাছ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

সহায় বটগাছ। তবে ছায়া নয়, মোবাইল পরিষেবা দিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাসের প্রায় সর্বত্র মোবাইল যখন খেলনা, তখন খানিকটা স্বস্তি দেয় এই বটগাছ।

ক্লাসের শেষে বন্ধুরা মিলে স্পেশ্যাল ক্লাস করার কথা। কিন্তু সেটা ঠিক কখন, তা জানার কথা শেষ মুহূর্তে। অথচ কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বাকি বন্ধুদের সঙ্গে। অনর্গল ফোন, মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু সে কাজে কিছুতেই সফল হচ্ছেন না আলিপুর ক্যাম্পাসের কয়েক জন পড়ুয়া।

অগত্যা ক্যাম্পাসের দোতলার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়িমরি দৌড়ে গেলেন এক কোণের বটগাছটার নীচে। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়াতেই একের পর এক মেসেজ আর হোয়াটসঅ্যাপের বার্তা পৌঁছে গেল ওঁদের কাছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাসে এটাই চেনা ছবি। কারণ গোটা ক্যাম্পাসে মোবাইলে সংযোগ পাওয়া অনেকটা মরুভূমিতে জলের খোঁজ মেলার মতো। অভিযোগ, এই সমস্যার সমাধান করতে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থও হয়েছেন পড়ুয়ারা, কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই।

ইতিহাস বিভাগের একাধিক পড়ুয়ার অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ঢোকার পর থেকে মোবাইলের সংযোগ কার্যত থাকে না। এই সমস্যা কয়েক বছর ধরে, বর্তমানে যা ক্রমেই বাড়ছে। ক্যাম্পাসের কাছেই রয়েছে মহিলা সংশোধনাগার। সেখানে থাকা জ্যামারের জন্যই এই অবস্থা বলে দাবি পড়ুয়াদের। প্রয়োজনীয় ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ করতে ক্যাম্পাসেরই একটি বটগাছের নীচে ভিড় করতে হয় তাঁদের। পড়ুয়াদের মুখে মুখে এটি ‘স্পিকিং জোন’ হিসেবেই পরিচিত। এ ছাড়াও সাততলায় একটি করিডরের কোণেও সাময়িক ভাবে কথা বলা যায়।

প্রসঙ্গত, পঠনপাঠনে ইন্টারনেট ব্যবহারের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দুটোই এখন যথেষ্ট। সেখানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারাটা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই দাবি শিক্ষা মহলের। বছর খানেক আগে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের (নাক) তরফে কয়েক জন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। ওই দলের সদস্যেরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পাসে ওয়াই-ফাই পরিষেবা রাখতে হবে। পড়াশোনার মান বাড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তাঁরা। অথচ সেই ঘাটতি রয়েই গিয়েছে বলে অভিযোগ পড়ুয়াদের।

পড়ুয়াদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে জ্যামারের ফ্রিকোয়েন্সি কমানোর অনুরোধ করেন তা হলেও কিছুটা সমস‍্যা মিটবে। না হলে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ব্রডব্যান্ড সংযোগ দিতে হবে। যাতে ইন্টারনেট ও হোয়াটসঅ্যাপ পরিষেবা পাওয়া যায়। না হলে বারবার ছুটতে হবে সেই বটগাছের নীচেই।

ওই ক্যাম্পাসের ছাত্রী সায়নী সরকার বলেন, ‘‘অনেক দিন হয়ে গেল। এ বার দ্রুত নেটওয়ার্কের সমস্যা নিয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ
করা উচিত।’’

কী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় কে বারবার ফোন করলেও ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, আলিপুর ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা উন্নত করতে কাজ শুরু হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CU Alipore Campus Network Internet Banyan tree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE