দৈনন্দিন: এ ভাবেই চলে পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র
সকালে মায়ের সাহায্যে হাতে হাতে কাজ করে বরাদ্দ হয় দশ মিনিটের বিশ্রাম। এর পরে একে একে ঝালিয়ে নেওয়া সহজপাঠ এবং নামতা। সামান্য কিছু খাওয়া সেরে বাড়ির পথে পা বাড়ায় বছর বারোর এক কিশোর।
ফের বিকেলে ফিরে আসে বাড়িতেই। তবে কাজ করতে নয়। কিশোর অজয় মাইতি তখন বইখাতা হাতে মনোযোগী ছাত্র। সেই পড়াশোনা চলে রাত আটটা পর্যন্ত। শিক্ষিকা গৃহকর্ত্রী রত্না লাহিড়ীর ইচ্ছে, অজয় স্কুলে ভর্তি হোক। পড়াশোনা করে চাকরি করুক। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি নথি। কারণ জন্মের শংসাপত্রই নেই তাঁর। অজয়ের বাবা রিকশাচালক, মা পরিচারিকার কাজ করেন। রত্নাদেবীর দাবি, ভবিষ্যতে যে ছেলের শংসাপত্রের প্রয়োজন হতে পারে, সে ভাবনাটাই নেই তাঁদের।
পাটুলির বাড়িতে স্বামী বিমলেন্দু লাহিড়ীর সঙ্গে থাকেন রত্নাদেবী। ছেলে বিদেশে থাকেন। মেয়ে বিবাহিত। এলাকারই একটি বস্তির বাসিন্দা অজয়। মায়ের সঙ্গে আসত ছেলেটা। ওকে দেখে পড়াশোনা করানোর ভাবনা এসেছিল লাহিড়ী দম্পতির। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রত্নাদেবী জানান, এক বার বেড়াতে গিয়ে ট্রেনে এক কিশোর ব্যাগ-ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তাঁরা। ছেলেটি ধরাও পড়ে যায়। জানা যায়, একটা দলের হয়ে কাজ করত সে। অজয়কে দেখে সেই ঘটনার কথাই মনে পড়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘তখনই ঠিক করি, ওকে লেখাপড়া শেখাব। যাতে খারাপ সঙ্গে না পড়ে।’’
কী বলছেন অজয়? ‘‘আমি পড়াশোনা শিখে বড় হতে চাই। তা হলে বাবা-মার মতো কষ্ট করতে হবে না।’’ অজয়ের নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন রত্নাদেবী ও তাঁর স্বামী। মাঝেমধ্যেই সেখানে কিছু কিছু করে টাকা জমা করেন তাঁরা। ‘‘হাতে টাকা পেলে আজেবাজে খরচ করতে পারে। তাই অ্যাকাউন্টেই জমা দিই। যখন দরকার পড়বে টাকাটা তুলে ব্যবহার করবে।’’
অজয়ের মতোই এ শহরে এমন অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে, যাদের জন্মের শংসাপত্র নেই। জন্মের শংসাপত্র না থাকায় একটি স্কুলের সঙ্গে কথা হয়েও আটকে গিয়েছে অজয়ের স্কুলে ভর্তি হওয়া। সে ক্ষেত্রে ওদের স্কুলে ভর্তির কী হবে? কলকাতা সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান কার্তিক মান্না জানাচ্ছেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। তিনি জানান, কোনও শিশুকেই স্কুলের বাইরে রাখা যাবে না। পড়ুয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মুচলেকা নিয়ে গেলেই তাকে স্কুল ভর্তি নিতে বাধ্য। আর জন্মের শংসাপত্র মিলবে কী ভাবে? কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের বেশি বয়স হলে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের হলফনামা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনামা-সহ চিঠি জমা করলেই পুরসভা থেকে জন্মের শংসাপত্র পাওয়া যাবে।
সমাধান শুনে রত্নাদেবী বলছেন, ‘‘তবে আর দেরি না করে দ্রুত সেই ব্যবস্থাই করতে হবে। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy