ট্যাংরার সেই অভিযোগপত্র।
ট্যাংরার ঘটনায় পুলিশ তাঁকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না বলে অভিযোগ করেছিলেন অ্যাম্বুল্যান্সে পিষে যাওয়া বৃদ্ধের পুত্রবধূ। রবিবার তিনি দাবি করলেন, “শুধু অভিযোগ গুরুত্ব না-দেওয়াই নয়, ঘটনার পরের দিন, বুধবার দুপুরে আমার করা অভিযোগপত্র জমা নেওয়ার পরে তার উপর ‘কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড’ (বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা হয়নি) লিখে দিয়েছিল পুলিশ। পরে আমরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালে ২৪ ঘণ্টা পরে নতুন ধারা যুক্ত করা হয়।”
আইনজীবীদের একটা অংশের মতে, এই অভিযোগ সত্যি হলে তা ‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার’ দিকেই ইঙ্গিত করে। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কগনিজ়েবল অফেন্সের ক্ষেত্রে দ্রুত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক জন মহিলার তরফে এমন গুরুতর অভিযোগ এসেছে দেখেও তাতে কগনিজ়েবল বা ধর্তব্যে আনার মতো কিছু খুঁজে পেল না পুলিশ? কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড করে দিল? ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে পুলিশ নিজেই এখানে বিচার করে নিচ্ছে।"
গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫০ থেকে ১২টার মধ্যে ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডে এক বৃদ্ধকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স পিষে দিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। ভোর চারটের আশপাশে এনআরএস হাসপাতালে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর আগে পুলিশ ৩০৮ (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা) এবং পরে ৩০৪ ধারায় (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো) মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। যদিও মৃতের পুত্রবধূর দাবি, “শ্বশুরমশাই মারা যাওয়ার পরেই ভোর পৌনে ছ’টা নাগাদ আমি আর আমার স্বামী ট্যাংরা থানায় গিয়ে আমাকে হাত ধরে টেনে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ জানাই। পুলিশ ওই সময় বলে দেয়, বেলা ১১টা নাগাদ বড়বাবু (থানার ওসি) আসবেন। তখন এসে যা বলার বলবেন।”
আরও পড়ুন: প্রতিবাদের সুরেই শেষ হল বইমেলা
মৃতের পরিবারের দাবি, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ট্যাংরা থানার ওসি তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানান, হাত ধরে টেনে তোলার ওই অভিযোগ লিখিত ভাবে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পর তাঁরা লিখিত ভাবে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ করেন বলে দাবি মৃতের পুত্র ও পুত্রবধূর।
সেই অভিযোগপত্রে স্ট্যাম্প মেরে দেওয়া হয়েছে ট্যাংরা থানার তরফে। স্ট্যাম্পটি মারার তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সময় বেলা ১২টা। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্র বলেন, ‘‘যত দূর জানি, মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পরে পুলিশ প্রথমে ৩০৮, ৩০৪ ধারা দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পুলিশ নতুন ধারা যোগ করে। সেই ধারা বুধবারই তারা দেয়নি কেন? লিখিত ভাবে যে অভিযোগ মহিলা করেছেন, তা ‘কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড’ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া কী!”
প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের অনেকেরই মতে, মামুলি বিষয়ে এই ধরনের স্ট্যাম্প মেরে ছেড়ে দেওয়া হয়। গুরুতর বিষয়ে এমন হওয়ার কথা নয়। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার বলেন, ‘‘কেউ এসে খুনের অভিযোগও করলে সেটাও তো সেই মুহূর্তে ভেরিফাই করা যায় না! তাই বলে এ রকম একটা রুটিন স্ট্যাম্প মেরে ছাড়া যায় না! এই মহিলার অভিযোগ গুরুতর। আসলে পুলিশ বলতে চাইছে, কনটেন্টটা ভেরিফাই করে মামলা শুরু করব। কিন্তু আইন বলে, কগনিজ়েবল অফেন্সে আগে মামলা কর, তার পর তা ভেরিফাই কর। মামলা ভুয়ো প্রমাণ হলে তো ব্যবস্থা নেওয়ার পথ আছে।’’
কলকাতার পুলিশ কমিশনার নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই মহিলাদের তরফে অভিযোগ এলে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ একাধিক বার দিয়েছেন অনুজ শর্মা। তার পরেও এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এ ব্যাপারে রবিবার পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘আমি ছুটিতে। বিশেষ কমিশনার জাভেদ শামিমের সঙ্গে কথা বলুন।’’ শামিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। মৃতের পুত্রবধূর অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি-সহ হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি লিখে রবিবার দুপুরে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। বার্তাটি দেখা হলেও এ দিন রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি।
মামলাটি শিয়ালদহ আদালতে বিচারাধীন। সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও মহিলার তরফে এমন অভিযোগ থাকলে ‘কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড’ বলে ছেড়ে দেওয়া যায় না। দ্রুত মামলা রুজু করতে হয়। বা আগে মামলা হয়ে থাকলে তার সঙ্গে ধারা জুড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে গাফিলতি প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ আধিকারিকদের কাছে জবাব চাইতে পারে আদালত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy