বধূ নির্যাতনের অভিযোগে এক আইনজীবীর গ্রেফতার হওয়াকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধল শিয়ালদহ আদালতে। অভিযোগ, রবিবার দুপুরে শুনানির সময়ে অভিযোগকারিণীর আইনজীবীদের দিকে তেড়ে যান অভিযুক্তের বেশ কয়েক জন সহকর্মী। তাঁদের মারধর করা হয়। অভিযোগকারিণীর উদ্দেশ্যে অশ্লীল কথাও বলার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি উঠেছে আদালতের কাজে বাধা দেওয়া ও পুলিশকে গালিগালাজের অভিযোগও।
পুলিশ জানায়, পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী শেখ সাহারাজা বিমানসেবিকা রাব্বাব হোসেনকে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। দু’বছর না কাটতেই সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। সপ্তাহ খানেক আগে রাব্বাব বেনিয়াপুকুর থানায় তাঁর স্বামী শেখ সাহারাজা, শ্বশুর শেখ দৌলত এবং শাশু়ড়ি মর্জিনাবিবির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনায় ইতিমধ্যেই শেখ দৌলত ও মর্জিনাবিবি আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। শনিবার রাতে বেনিয়াপুকুর থেকে সাহারাজাকে ধরে পুলিশ।
এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তাঁকে হাজির করা হয়। উপস্থিত ছিলেন অভিযোগকারিণী রাব্বাব ও তাঁর পাঁচ আইনজীবী। দুপুর দু’টো নাগাদ হঠাৎই দু’পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে বচসা শুরু হয়। অভিযুক্তের সহকর্মীরা রাব্বাবের আইনজীবীদের মেঝেতে ফেলে মারেন বলে অভিযোগ। আদালতে রাব্বাবের অভিযোগ, ‘‘স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি মিলে আমাকে খুনের চেষ্টা করেছিল। ট্যাবলেট খাইয়ে পাগল করে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়।’’ পুলিশে ওই মহিলার অভিযোগ, গত অক্টোবরে তাঁকে শ্বশুরবা়ড়ির লোকেরা জোর করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তার পরে আর শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
অভিযুক্তের আইনজীবী মানসকুমার বর্মণ আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। তাঁকে অবিলম্বে জামিন দেওয়া হোক। সরকারি পক্ষের আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে।’’ উভয় পক্ষের কথা শুনে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুসানা রায় ধৃতকে ২ জুন পর্যন্ত জেল হেফাজত দেন।
এ দিন শিয়ালদহ আদালতের আইনজীবীদের আচরণ দেখে হতবাক অন্য আইনজীবীরা। প্রবীণ আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আইনজীবীরা আইনের ঊর্ধ্বে নন। আদালতের মধ্যে এমন ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আদালত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এমন ঘটনা আইনের কলঙ্ক।’’
ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযুক্তের আইনজীবী মানসবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের কাজ মেনে নেওয়া যায় না।’’ ধৃতের বাবা শেখ দৌলত শিয়ালদহ আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘একদল আইনজীবীর আপত্তিকর আচরণের জন্যই আমার ছেলে জামিন পেল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy