বাগড়ি মার্কেটের কাঠামো থেকে ভস্মীভূত সামগ্রী ও ধ্বংসাবশেষ।—ফাইল চিত্র
রাজ্যে প্রথম দফার নির্বাচনের ঠিক আগের দিন পুড়ে যাওয়া বাগড়ি মার্কেট খুলে দেওয়ার ‘প্রতিশ্রুতি’ দিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। বুধবার ওই বাজার পরিদর্শনের পরে মন্ত্রী বলে দেন, ‘‘মার্কেটের ৫০ শতাংশ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কাজ বাকি রয়েছে। তবে ঠিক আছে, আগামী ১৪ দিনের মধ্যে বাগড়ি মার্কেট খুলে দেওয়া হবে।’’
ভোটের জন্য রাজ্য জুড়ে আদর্শ আচরণবিধি চালু রয়েছে। সেই কারণে মন্ত্রীর এই ঘোষণাকে নিশানা করতে ছাড়েনি বিজেপি। উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘মন্ত্রী সাহেব এত দিন কোথায় ছিলেন? ভোটের আগে তাঁর বাগড়ি খোলার কথা মনে পড়ল? সুজিতবাবু এ ভাবে প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন না। আমরা বিজেপি-র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব।’’ সুজিতবাবু অবশ্য এতে কোনও ভোটের খেলা দেখছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা খেতে পাচ্ছেন না। আমাদের কাছে বারবার বলছিলেন। তাই মার্কেট খোলার কথা বলেছি। সব কিছুতে ভোটের স্বার্থ দেখাটা ঠিক নয়।’’ নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের সময়ে এ ভাবে কোনও আশ্বাস দেওয়া যায় না। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’’
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আগুন লাগে বাগড়ি মার্কেটে। কোনও প্রাণহানি না ঘটলেও ভস্মীভূত হয়ে যায় গোটা ভবন। চার দিন পরে দমকল কোনও মতে আগুন নেভাতে পারলেও এক সপ্তাহের আগে বাড়িটির ভিতরে ঢোকা যায়নি। এর পরে শুরু হয় বাগড়ি-কাণ্ডের দায় নিয়ে টানাপড়েন। দমকলের সুপারিশের ভিত্তিতে বাগড়ি মার্কেটের মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। সেই সঙ্গে ওই মার্কেটের ভিতরের পরিস্থিতির উন্নতি না করলে ব্যবসার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতিকে তখনই অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে দমকল। সেই সুপারিশ মেনে কাজ শুরু করলেও ব্যবসায়ীদের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থায় দমকল আধিকারিকেরা এত দিন সন্তুষ্ট হতে পারেননি। গত মার্চেও তাঁরা এক বার মার্কেট পরিদর্শন করে যান। মঙ্গলবার বাগড়ি মার্কেট পরিদর্শন করেন সুজিতবাবু। নতুন অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পরে দমকলের ডিজি জগমোহনের সঙ্গে মার্কেটে বসেই বৈঠক করেন তিনি। এর পরে বৈঠক করেন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে। সেখানে সুজিতবাবু জানিয়ে দেন, মার্কেটের ভিতরে নীচের তলায় ৫০ হাজার লিটারের জলাধার তৈরি করতে হবে। সুপারিশে বলা থাকলেও তা এখনও হয়নি। তবে ব্যবসায়ী সমিতির তরফে ছাদের উপরে ছোট ছোট জলাধার মিলিয়ে মোট ৭০ হাজার লিটার জলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু তা-ও দমকলের সুপারিশ মেনে এক লক্ষ লিটার করার নির্দেশ দেন সুজিতবাবু। পাশাপাশি, অগ্নি-নির্বাপণের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রাখতে হবে বলেও জানিয়ে দেন সুজিতবাবু। দমকলের ডিজি জানান, ছাদে কিছু বেআইনি ঘর রয়েছে। সেগুলির জন্য অগ্নি-নির্বাপণে সমস্যা হয়েছিল। সেগুলিও দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে সুজিতবাবু বলেন, ‘‘সব কাজ শেষ করতে খুব বেশি হলে ছ’মাস লাগবে। সেই সময়টা আমি দিচ্ছি। তার আগে কাজ শেষ করবেন কথা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে একটা চিঠি আমাকে দিন। চিঠি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কেট খুলে দেব।’’ তবে মার্কেট খুললেও ‘এ’ ব্লক এখনই ব্যববার করা যাবে না বলেও এ দিন জানিয়ে দেন মন্ত্রী।
কিন্তু ঠিক ভোটের আগে এই পরিদর্শন কেন? সুজিতবাবু বলেন, ‘‘আমি আগেও আসতে পারতাম। এত দিন আমাদের দমকল দফতরের আধিকারিকেরা দেখছিলেন। তাই আমি আসিনি। এ বার আসাটা দরকার মনে হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy