Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রচারে কান ঝালাপালা, ভয়েই অনীহা নালিশে?

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, এমনিতে জনসভাগুলির ক্ষেত্রে শব্দসীমার মাত্রা ৮০ ডেসিবেল ধরা হয়। সেই মাত্রার মধ্যে মাইক বাজানো হলে কোনও সমস্যাই নেই। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই মাত্রা লঙ্ঘিত হয়।

 অটোয় মাইক লাগিয়ে চলছে ভোটের প্রচার। মুচিবাজারে। নিজস্ব চিত্র

অটোয় মাইক লাগিয়ে চলছে ভোটের প্রচার। মুচিবাজারে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

প্রচারে মাইক ব্যবহার করায় কান যতই ঝালাপালা হোক, গত পঁচিশ বছরে শহরে লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে শব্দদূষণ-বিধি লঙ্ঘিত হওয়ার জন্য একটিও নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েনি। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের এমনটাই খবর। অথচ শব্দবিধি এ সময়ে হামেশাই লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, কেউ অভিযোগ দায়ের করে রাজনৈতিক দলগুলির ‘বিরাগভাজন’ হতে চান না! তাই প্রচার যেমন চলছে, চলতে থাকে!

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, এমনিতে জনসভাগুলির ক্ষেত্রে শব্দসীমার মাত্রা ৮০ ডেসিবেল ধরা হয়। সেই মাত্রার মধ্যে মাইক বাজানো হলে কোনও সমস্যাই নেই। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই মাত্রা লঙ্ঘিত হয়। অথচ তা হলেও এ ব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ গত পাঁচটি লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দায়ের হয়নি এবং সে কারণে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও ‘শো কজ’ করা হয়নি বলে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর। পর্ষদের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘গত ২৫ বছরে শো কজ করা হয়নি। তবে অনেক সময়েই লোকজন বলেন যে প্রচারের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের না হলে তো আর আমরা কিছু করতে পারি না। তদন্তের ভিত্তিতে অভিযোগ ঠিক প্রমাণিত হলে তখন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে আমরা শো কজ করতে পারি।’’

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, প্রচারের সময়ে শব্দবিধি নিয়ে প্রতিবার যেমন নির্দেশ জারি করা হয়, এ বারও তেমনটাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানতে হবে বলে সচেতনতামূলক প্রচারও করা হচ্ছে। কিন্তু এত করেও শব্দবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পর্ষদের আধিকারিকদের একাংশ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, যে ভাবে নির্বাচনী প্রচারের সময়ে ধারাবাহিক ভাবে মাইক চলে, সেখানে শ্রবণশক্তির সমস্যা হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসার কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শব্দদূষণ নিয়ে যাবতীয় আলোচনা শুধু কালীপুজো-দীপাবলির সময়টুকুর মধ্যেই সীমিত। ইএনটি চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা বলেন, ‘‘কালীপুজোর সময়ে শব্দদূষণ নিয়ে আমাদের কাছে বহু তথ্য আছে। কিন্তু নির্বাচনের সময় যে শব্দবিধি লঙ্ঘিত হয়, সে সম্পর্কে কোনও তথ্যভাণ্ডার এখনও তৈরি হয়নি। সেটা হলেই বোঝা যেত, এই সময়ে শব্দদূষণের মাত্রাটা কী!’’ আর এক ইএনটি বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘একটানা উচ্চগ্রামে মাইক চলতে থাকলে কানে শোনার সাময়িক সমস্যা তো হয়ই। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এ বিষয়টি নিয়ে সবাই মুখ খুলতে ভয় পান।’’

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দিষ্ট নির্দেশই রয়েছে, রাজনৈতিক প্রচারই হোক বা অন্য কিছু, মাইকে সাউন্ড লিমিটার ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু নির্দেশ থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের একাংশের। ব্রিগেডে মাইক বাজানোয় শব্দবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে পরিবেশ আদালতে এর আগেই মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সুভাষবাবু বলছেন, ‘‘যে ভাবে চারদিকে প্রচার চলছে, তাতে শব্দবিধি তো ভাঙছেই। কিন্তু যাঁদের দেখার কথা, সেই পুলিশই তো নীরব! তারা কি আর নেতা-নেত্রীদের জোরে মাইক বাজানোর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE