Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Abduction

হাইল্যান্ড পার্কের ফ্ল্যাটে দু’দিন আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, পেছনে বড় চক্রের হদিশ

খাস কলকাতা শহরের বুকে দুই ব্যক্তিকে বহুতলে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আটকে রেখে লাখ টাকার বেশি মুক্তিপণ আদায় করল কয়েক জন দুষ্কৃতী। দুই অভিযুক্তকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারলেও বাকি অভিযুক্তরা এখনও ফেরার। তদন্তকারীদের সন্দেহ এই চক্রে যুক্ত রয়েছে আরও অনেকেই।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:১০
Share: Save:

খাস কলকাতা শহরের বুকে দুই ব্যক্তিকে বহুতলে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আটকে রেখে লাখ টাকার বেশি মুক্তিপণ আদায় করল কয়েক জন দুষ্কৃতী। দুই অভিযুক্তকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারলেও বাকি অভিযুক্তরা এখনও ফেরার। তদন্তকারীদের সন্দেহ এই চক্রে যুক্ত রয়েছে আরও অনেকেই।

ঘটনার সূত্রপাত চলতি মাসের ১৪ তারিখ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল পেশায় জীবম বিমার এজেন্ট। ওই দিন বিকেলে তিনি একটি ফোন পান। যে ব্যক্তি ফোন করেন, তিনি নিজেকে সুমন জানা হিসাবে পরিচয় দেন। প্রশান্তকে একটি ব্যবসায়িক প্রস্তাব দিয়ে দেখা করতে বলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রশান্ত ওই দিন রাত আটটা নাগাদ নিজের মোটরবাইকে বাইপাস লাগোয়া হাইল্যান্ড পার্কে পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু প্রদীপ মাইতি। ফোনেই দু’জনকে বলা হয়েছিল হাইল্যান্ড পার্কে অপেক্ষা করতে। সেখানে সুমন জানা কাউকে পাঠিয়ে দু’জনকে নিজের অফিসে নিয়ে যাবেন।

সেই মতোই এক যুবক প্রশান্ত এবং প্রদীপকে একটি বহুতলের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। প্রশান্ত পুলিশকে বলেছেন, সেখানকার একটি ঘরে তিন জন ছিলেন। অন্য ঘরে চারটি পেল্লায় কুকুর। তাঁর অভিযোগ, প্রথমে কয়েক মিনিট একটি ব্যবসার ব্যাপারে কথা হয়। এর পরই হঠাৎ এক জন উঠে এসে নিজেকে ডায়মন্ড হারবারের এক পুলিশকর্তা হিসাবে পরিচয় দেন। প্রশান্তর আইনজীবী সুবীর রঞ্জন চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে বলেন, “ওই ব্যক্তি হঠাৎ প্রশান্তর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে মারধর শুরু করে। প্রদীপ বাঁচানোর চেষ্টা করলে বাকিরাও প্রশান্তকে মারধর করতে থাকে যখন।” অভিযোগ, ওই তিন ব্যক্তি দাবি করে, প্রশান্তর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। যদি প্রশান্ত তিন লাখ টাকা দেয় তবেই তাকে ছাড়া হবে। প্রশান্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, এর পরই তাঁর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। সেই মোবাইল থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করে প্রশান্তের স্ত্রীকে টাকা দিয়ে যেতে বলা হয়। অভিযোগ, তার মাঝে প্রশান্তকে জোর করে স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়ে নেওয়া হয়। তাঁর কাছ থেকে এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়।

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে অপহরণকারীদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে রাতেই আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৮৫ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারীদের দেওয়া একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। এর পরের দিন অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর বিকেল চারটে নাগাদ প্রশান্তকে একটি গাড়ি করে পৈলানের কাছে নামিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশান্তর সঙ্গী প্রদীপকে আরও এক দিন আটকে রেখে ১৬ নভেম্বর ছাড়া হয়। প্রশান্ত তদন্তকারীদের বলেন যে, যে ঘরে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে সর্ব ক্ষণ চারটি কুকুর পাহারা দিত। তাই কোনও ভাবে পালানোর সুযোগ তিনি পাননি।

আরও পড়ুন: কলকাতার বুকে সাঙ্কেতিক রেডিয়ো বার্তার চালাচালি, বড় ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা

প্রশান্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, ছাড়া পাওয়ার এক দিন পর ফের একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে তাঁর কাছে। সেখানে বলা হয় প্রশান্তর মোবাইল এবং মোটর বাইক সোনারপুর থানায় রাখা আছে। প্রশান্ত এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে, তিনি আর সেই ব্যক্তির কাছে যাননি। ওই ব্যক্তি নিজেকে সোনারপুর থানার আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: নিরাপত্তারক্ষীর হাত দিয়ে পুরসভায় ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়

১৯ নভেম্বর প্রশান্ত সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ তাঁকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে যায় এবং ফ্ল্যাট তালা বন্ধ পায়। পুলিশ বাকি বাসিন্দাদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ফ্ল্যাটের মূল মালিক সেখানে থাকেন না। কয়েকটি কুকুর রাখা আছে ফ্ল্যাটে। দু’জন মাঝে মাঝে এসে সেই কুকুরদের দেখভাল করে যায়। পুলিশ মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য সূত্র ধরে সুমন জানা এবং সুদীপ্ত জানা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। দু’জনেই সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই অপহরণ চক্রে আরও অনেকে যুক্ত আছেন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “ধৃতরা দাবি করেছিল যে, তাঁরা প্রশান্তর কাছ থেকে টাকা পায়। কিন্তু সেই পাওনা টাকার সপক্ষে কোনও প্রমাণ তারা দিতে পারেনি।” বৃহস্পতিবার ধৃতদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, যে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল সেটি অর্পিতা সর্দার নামে এক মহিলার নামে। তাঁকেও জেরা করা হয়েছে। সেখান থেকে আরও কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে।

(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Abduction Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE