Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টির আকাল, বনসৃজনে রাশ টানার সিদ্ধান্ত

শহরে বনসৃজনের মূল দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুরসভা। প্রতি বছরই শহরের রাস্তা এবং পুরসভা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন পার্ক ও পুর উদ্যানে গাছের চারা বসানোর আয়োজন করে পুরসভা।

তরুচ্ছায়া: অরণ্য সপ্তাহ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের উদ্যোগে আয়োজিত বৃক্ষদান উৎসব। শনিবার, হেদুয়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ

তরুচ্ছায়া: অরণ্য সপ্তাহ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের উদ্যোগে আয়োজিত বৃক্ষদান উৎসব। শনিবার, হেদুয়ায়। ছবি: সুমন বল্লভ

কৌশিক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

খাতায়-কলমে ‘অরণ্য সপ্তাহ’ চলছে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে বনসৃজন প্রকল্প আপাতত শিকেয়। এই ঘটনায় কপালে ভাঁজ পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের। যে সব সরকারি সংস্থা প্রতি বছর এই সময়ে বনসৃজন করে তাদের অনেকেই সমস্যায় পড়েছে। অনেকেরই আশঙ্কা, বৃষ্টি না হলে যে সব গাছের চারা বসানো হচ্ছে, সেগুলির বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বনসৃজনে রাশ টেনেছে প্রায় সবক’টি সংস্থাই।

শহরে বনসৃজনের মূল দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুরসভা। প্রতি বছরই শহরের রাস্তা এবং পুরসভা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন পার্ক ও পুর উদ্যানে গাছের চারা বসানোর আয়োজন করে পুরসভা। চলতি মাসের ১৪ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত অরণ্য সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এ বছর বনসৃজনের উদ্বোধন করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

কলকাতা পুরসভার উদ্যান দফতরের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘শহরে বৃষ্টি কোথায় যে বনসৃজন হবে? সেই কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাউন্সিলদের বলব, রাস্তায় যে সব জায়গায় জল দেবার ব্যবস্থা নেই, এই মুহূর্তে সেই জায়গায় গাছ না বসাতে। পরে ভাল বৃষ্টি হলে কাউন্সিলরেরা ফের গাছ বসাতে পারবেন।’’ তিনি জানান, কলকাতা পুরসভার যে সব পার্কে স্প্রিঙ্কলার রয়েছে, সেখানে গাছ বসানো হচ্ছে। ওই জায়গায় চারাগাছে জল দেওয়ার কোনও অসুবিধা নেই।

পুরসভার এক আধিকারিক জানান, আপাতত চারটি পার্কে পুরসভা স্প্রিঙ্কলার বসিয়েছে। বাকি কোনও পার্কে স্প্রিঙ্কলার নেই। যদিও কিছু জায়গায় মালিরা উদ্যান বা পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ করেন। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, এ বছর শহরে কত গাছ লাগানো হবে নির্দিষ্ট ভাবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে বনসৃজন করতে চারা প্রতি প্রায় ১০০ টাকা খরচ হয়। বেশি সংখ্যক গাছের চারা নষ্ট হলে টাকার অপচয় হওয়ারও আশঙ্কা থেকেই যায়।

একই ভাবে, কেএমডিএ-র তরফেও গাছ বসানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃষ্টি না হওয়ায় গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে আপাতত খুব কম সংখ্যক গাছের চারা পার্কে বা সরোবরে বসিয়ে অরণ্য সপ্তাহের নিয়মরক্ষা করা হয়েছে। তবে যেখানে চারাগাছ বসানো হচ্ছে সেখানে আপাতত জলের ব্যবস্থা থাকছে।’’ একই ভাবে বৃষ্টির অভাবে চারাগাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরাও।

রাজ্য বন দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছরই জুলাই মাসে বনসৃজন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কারণ, এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ার দরুণ গাছের বৃদ্ধি সহজে হয়। রাজ্য বন দফতরের উপ-নগরপাল রবীন্দ্রনাথ সাহা (আরবান রিক্রিয়েশন ফরেস্ট্রি) বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গে অনাবৃষ্টি গাছ বসানোর মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, বনসৃজনের ক্ষেত্রে আশঙ্কা

হওয়ারই কথা। জল না পেলে গাছ বাঁচানোই মূল সমস্যা।’’ উদ্ভিদবিদ রণজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘জল না পেলে গাছ বাঁচানো মুশকিল। কারণ, গাছের শিকড়ের মাধ্যমে জল পাতায় গিয়ে সেগুলিকে সজীব করে। তবে অতিবৃষ্টিও গাছের ছোট চারার পক্ষে ক্ষতিকর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment KMC Tree Plantation Rain Deficit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE