Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
medical

আতঙ্কের মেডিক্যালে গ্রুপ-ডি কর্মীরাই হয়ে উঠলেন রোগীদের ত্রাতা

মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে সঞ্জু বলেন, ‘‘খবরের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে সবে চায়ের ভাড়ে চুমুক দিয়েছি। এমন সময় হইহই শব্দ। ছুটে গিয়ে দেখি একতলার ওষুধের গুদামে আগুন!

উদ্ধার কাজে হাত লাগালেন গ্রুপ ডি কর্মীরাই। ছবি: পিটিআই

উদ্ধার কাজে হাত লাগালেন গ্রুপ ডি কর্মীরাই। ছবি: পিটিআই

সোমনাথ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৪৩
Share: Save:

ঘটনার পর প্রায় সাত-আট ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তখনও মেডিক্যাল কলেজের গ্রুপ-ডি কর্মী সঞ্জু দে-র চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।

মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়ে সঞ্জু বলেন, ‘‘খবরের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে সবে চায়ের ভাড়ে চুমুক দিয়েছি। এমন সময় হইহই শব্দ। ছুটে গিয়ে দেখি একতলার ওষুধের গুদামে আগুন! গলগল করে ধোঁয়া ঢুকছে ওয়ার্ডে। চায়ের ভাঁড় ফেলে দিয়ে মেডিসিন বিভাগে ঢুকে পড়ি। চিৎকার করে মানস, সওকত, সুরজদের ডাক দিই। এত রোগীকে কী করে বার করব বুঝতে পারছিলাম না! ভগবান সহায়, তাই ওঁদের সুস্থ ভাবে বার করে আনতে পেরেছি।’’

সঞ্জুর পাশে দাঁড়িয়ে তখন চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছেন মহম্মদ সওকত। তিনিও গ্রুপ-ডি কর্মী। ধোঁয়ার আক্রমণে চোখ তখন টকটকে লাল। তাঁর কথায়, “একতলায় ডাঁই করে ওষুধ রাখা থাকে। ওখান থেকেই কোনও ভাবে আগুন লেগেছে। হাতের কাছে যা পেয়েছি। কাপড়, চাদর, তাতেই জড়িয়ে রোগীদের নামিয়ে এনেছি। কাউকে কোলে করে, কাউকে দু’হাত পা ধরে নামিয়ে এনেছি। তখন একটাই কথা মাথায় ছিল, যে করেই হোক রোগীদের বাঁচাতেই হবে।”

আরও পড়ুন: মেডিক্যাল কলেজে আগুন, হুড়োহুড়িতে এক রোগীর মৃত্যু

এই গ্রুপ-ডি কর্মীদের ব্যবহার, তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ প্রশ্ন তোলেন। হাসপাতালে পান থেকে চুন খসলেই গ্রুপ-ডি কর্মীদের গালমন্দ শুনতেও দেখা যায়। কিন্তু এ দিন সেই ওঁরাই দেখিয়ে দিলেন, রোগীদের জীবন তাঁদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

রোগীর পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে উদ্ধারে নেমে পড়েন গ্রুপ-ডি কর্মীরাই। নিজস্ব চিত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হাসপাতালে আগুন লাগে সকাল পৌনে আটটা নাগাদ। দমকলের ইঞ্জিন আসে তার প্রায় মিনিট ১৫ পর। সেই সময়ে আগুন-আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিলেন রোগীরা। রোগীর পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে তাঁদের উদ্ধারে নেমে পড়েন ওই গ্রুপ-ডি কর্মীরাই। মানস সেন ছিলেন ওই উদ্ধারকারী দলে।

দেখুন উদ্ধার কাজের সেই ভিডিয়ো:

তিনি বলেন, “হাসপাতালের আগুন দেখে আমরির ঘটনা মনে পড়ে গেল। আশঙ্কায় ছিলাম, এখানেও একই কাণ্ড হবে না তো! তার পরেই ঠিক করি, যা করার এখনই করতে হবে। কোথায় স্ট্রেচার তা-ও জানি না। দমকল বা পুলিশের ভরসায় বসে না থেকে উদ্ধার কাজে হাত লাগাই। রোগীর আত্মীয়রাও যে যেখানে ছিল ছুটে এলেন। ওঁদেরকে সাহায্য করার পাশাপাশি আমরাও এক এক করে রোগীদের নামিয়ে এনে এমার্জেন্সি বিভাগে ঢুকিয়ে দিলাম।”

আরও পড়ুন: বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হয়েছিল দু’কেজির সকেট বোমা, ধারণা সিআইডি-র

ওদের মধ্যে মাইকেল মাঝি রাতে হাসপাতালেই ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে কলেজ স্ট্রিটের দিকে গিয়েছিলেন জলখাবার খেতে। এসে দেখেন হাসপাতালটা যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়: “কিছু ক্ষণ আগেই দেখে গেলাম সব ঠিক রয়েছে। ফিরে এসে দেখি রোগী নিয়ে এ দিক ও দিক ছোটাছুটি করছে বন্ধুরা। নতুন হস্টেলের দিকে তাকাতেই দেখি আগুন জ্বলছে। এমার্জেন্সিতে এক এক করে রোগীদের নিয়ে আসি। ডাক্তারবাবুরাও ঝঁপিয়ে পড়েছিলেন।”

কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE