চাঁদনি চকের প্ল্যাটফর্মে ঢুকেই দেখি, কবি নজরুলমুখী মেট্রো দাঁড়িয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩৬ মিনিট। ট্রেনটা লেট ছিল। পড়িমড়ি করে দৌড়ে উঠতে গিয়ে সবে দু’হাতে দরজাটা ধরেছি। বাঁ হাতে ছাতা। পা বাড়িয়ে উঠতে যাব, বুঝলাম দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দরজাটা চেপে খুলে রাখার চেষ্টা করেও কাজ হল না। হাত বার করতে যেতেই ট্রেনটা ছেড়ে দিল। কোনও মতে ডান হাতটা বার করি। বাঁ হাতের ছাতা তখনও আটকে কামরার দরজায়!
চালকের ঠিক পিছনের কামরা। নন এসি। ট্রেন এগোচ্ছে, হাতে ছাতা ধরা অবস্থায় আমিও এগোচ্ছি!
কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। ঝটিতি প্ল্যাটফর্মে থাকা পুলিশকর্মীরা বাঁশি বাজিয়ে, রোকো রোকো বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাঁদেরই এক জন আমাকে টেনে সরিয়ে আনেন। তত ক্ষণে চলে এসেছেন আরও পুলিশকর্মী। বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থেমেছে ট্রেনটিও। কিছু একটা ঘটেছে বুঝে প্ল্যাটফর্মে থাকা লোকজনও জড়ো হয়ে গিয়েছেন। লোক সরিয়ে তখন এক পুলিশকর্মী ট্রেনের ভিতর থেকে আমার ছাতাটা নিয়ে আসেন। তত ক্ষণে প্ল্যাটফর্মে এসে পড়েছেন দুই সহকর্মীও। কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী ছাতা ফেরত দিয়ে বললেন, আমার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখে দিতে। কেন জানতে চাইলে বললেন, ‘লিখে দিন। এমন একটা ঘটনা ঘটল!’
তত ক্ষণে আমি আর আমার সহকর্মীরা বারবার বলতে থাকি, মেট্রোর দরজায় কিছু আটকালে তো দরজা বন্ধ হওয়ার কথা নয়। আজ না হয় হাত বার করতে পেরেছিলাম, না হলে কি আমাকে সঙ্গে নিয়েই মেট্রো ছুটত? যে ভাবে বেশ কয়েক বছর আগে এক ভদ্রলোককে নিয়ে একটা স্টেশন ছুটেছিল মেট্রো! ওই ভদ্রলোকের দুই হাত ছিল কামরার ভিতরে। বাকি শরীরটা বাইরে। কাঁধের ব্যাগটার জন্য টানেলের ধাক্কা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: নন এসি এখন বিভীষিকাই
পুলিশ বোঝাতে থাকেন, শেষ কামরায় থাকা গার্ড দরজা খোলা-বন্ধ করার কাজ করেন। কিন্তু গার্ডের কামরায় থাকা যন্ত্রে তো ধরা পড়ার কথা যে, কোনও দরজায় কিছু আটকাল কি না! তা হলে কি মেট্রোর দরজায় থাকা সেন্সর কাজ করে না? সেন্সর কাজ করছে কি না, তা-ও নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হয় না?
সপ্তাহ খানেক আগে এক রাতে কালীঘাট স্টেশনে মেট্রো থেকে নামার পরে দেখেছিলাম, বছর দু’য়েকের বাচ্চা কোলে নিয়ে বাবা মেট্রোয় উঠছেন। বাচ্চাটার ডান পা আটকে গিয়েছিল দরজায়। সকলে মিলে চিৎকার করায় অবশেষে দরজাটা খুলেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy