অপেক্ষা: এসএসকেএম চত্বরে রোগীর পরিজনেদের ভিড়। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
গুরুতর অসুস্থ রোগীকে সেরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ করে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে চালু হওয়া মেমো নম্বর ঘিরে এসএসকেএম-এর দালাল এবং হাসপাতালের কিছু কর্মী দুর্নীতি চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে দীর্ঘ অপেক্ষার তালিকায় থেকেও ভর্তি হতে পারছেন না গুরুতর অসুস্থেরা। পাশাপাশি কেন সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে, কেন স্থানীয় স্তরে ক্ষমতা থাকবে না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
ছোট-বড় রাজনৈতিক নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলরের সুপারিশ নিয়ে আসা রোগীর চাপে নাজেহাল হচ্ছিলেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। বছর দুয়েক আগে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকেই হাসপাতালের অধিকর্তার অফিসে সুপারিশ আসবে নির্দিষ্ট স্লিপে। এ ছাড়া অপেক্ষমাণ রোগীদের ‘ওয়েটিং নম্বর’ দেওয়া হবে। কার কত নম্বর এবং কোন রোগীর শারীরিক অবস্থা কী রকম, তা বিচার করে একটি বোর্ড প্রতিদিন বিভিন্ন দফতরে রোগী বেছে নেবেন।
অভিযোগ, সেই বোর্ড এখন নিষ্ক্রিয়। বেশির ভাগ বিভাগে রোগের গুরুত্ব বিবেচনা না করেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের মেমো নম্বরে গুরুত্ব দিয়ে ভর্তি চলছে। ফলে, যাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের মেমো নেই, তাঁরা দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকছেন। চিকিৎসকদের একটি অংশের অভিযোগ, দালালচক্র মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের স্লিপ জোগাড়ের জন্য রোগীদের থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে। এক বিভাগীয় প্রধানের আক্ষেপ, ‘‘সুপারিশ বেড়েছিল বলেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে রোগী পাঠানো শুরু হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল প্রশাসনের কিছু লোক মৌখিক ভাবে জানান, ওই মেমো নম্বর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ হিসেবে ধরে ভর্তিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফলে ৬৬৬ নম্বর ওয়েটিং-এর রোগী দেড় মাস ধরে ঘুরছেন। অথচ বিশেষ স্লিপ নিয়ে আসা ১২১০ নম্বরের রোগী ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন।’’
হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্তার দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে মেমো নম্বর নিয়ে এলেও চিকিৎসকদের বলি, যাঁর শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ, তাঁকেই ভর্তি করতে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আগে ৪০ শতাংশ শয্যায় সুপারিশে আসা রোগীরা ভর্তি হতেন, এখন তা ২০ শতাংশ হয়েছে।’’ তবে এক প্রবীণ চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘এমনও হয় যে, খালি হওয়া পাঁচটি শয্যার চারটেতেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে পাঠানো রোগী ভর্তি হয়েছেন।’’
এসএসকেএমের প্রাক্তন অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘আমার সময়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ারের রজত চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বোর্ড হয়েছিল। প্রতিদিন অধিকর্তার দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে যে স্লিপ আসত, আর যাঁরা এমনিই ওয়েটিংয়ে রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাগজ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে ভর্তি নেওয়া হত। সেই বোর্ডই তো নিষ্ক্রিয়। এখন সব স্লিপ সংশ্লিষ্ট বিভাগে আসায় সমস্যা বেড়েছে।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সুপারিশের চল ছিলই। এখন নিয়মে বাঁধার চেষ্টা হচ্ছে। কোনও ব্যবস্থাই ত্রুটিহীন হতে পারে না। দালালেরা সবেতেই ফায়দা তুলতে চায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy